দিল্লিতে বিষাক্ত কুয়াশা ঘনীভূত হওয়ার মধ্যেই সোমবার সরকারি দূষণ মনিটরিং অ্যাপ ও ওয়েবসাইট বেশিরভাগ সময় বন্ধ ছিল। এটি বাসিন্দাদের দূষণের মাত্রা জানার পথ বন্ধ করে দেয়। রাতে আপডেট এলে দেখা যায়, মাত্রা সিভিয়ার ক্যাটাগরিতে (৪০০-এর ওপর) পৌঁছে গেছে।
সেন্ট্রাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডের (সিপিসিবি) এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) বুলেটিন অনুযায়ী, রবিবারের ৩৭০ থেকে সোমবার কতটা খারাপ হয়েছে, তা জানার কোনো উপায় ছিল না। শহরের ৩৯টি মনিটরিং স্টেশনের মধ্যে কতগুলো সিভিয়ার ক্যাটাগরিতে, তাও জানা যায়নি। রবিবার এই সংখ্যা ছিল ২৪।
সমীর অ্যাপ সারাদিন ৩৪৫-এ আটকে ছিল। রাত ১০টার দিকে আপডেট হয়ে ৩৯১ দেখায়। দুই ঘণ্টা পর ৩৯৮। মৌসুমের সবচেয়ে খারাপ রিডিং। সিপিসিবি রাত ১১টার দিকে বুলেটিন প্রকাশ করে, যাতে বিকেল ৪টার একিউআই ৩৬২ দেখায়।
এইচটি মূল দূষক পিএম২.৫ ও পিএম১০-এর র ডেটা দেখার চেষ্টা করে। সকালে ৩৪-৩৭টি স্টেশন রিপোর্ট করছিল। দুপুরের আগে তা ২৭-এ নামে। দুপুরের পর সব স্টেশনের ডেটা শূন্য হয়ে যায়। আটটি দূষকের মধ্যে এক ঘণ্টায় মাত্র একটি স্টেশন রিপোর্ট করে।
ডেটা ব্ল্যাকআউট বিকেলে ঘটে, যখন কুয়াশা ঘন হয় এবং বাসিন্দারা অবস্থার অবনতি জানান। বিমানবন্দরের দৃশ্যমানতা রবিবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৫টায় ৩০০০ মিটার থেকে সোমবার একই সময়ে ১৫০০ মিটারে নামে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, দিনের আলোয় কুয়াশা দূষক জমার ইঙ্গিত দেয়, কুয়াশার নয়।
সিপিসিবি কর্মকর্তারা মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেননি।
দুপুর পর্যন্ত ২৪টি স্টেশনের ডেটা ভয়াবহ চিত্র দেখায়। পিএম২.৫ সাব-ইনডেক্স সকাল ৫টা থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায় ৪০০-এর ওপর ছিল। সকাল ৭টার দিকে ৪৩৬ ছাড়ায়।
সিপিসিবি’র পদ্ধতিতে এইচটি বিকেল ৪টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার গড় একিউআই ৩৬২ হিসাব করে। কিন্তু বিকেলের চার ঘণ্টার ডেটা না থাকায় এটি বাস্তবতা কম দেখায়।
সিপিসিবি’র পদ্ধতিতে একিউআই হিসাবে পিএম২.৫ বা পিএম১০-এর অন্তত ১৬ ঘণ্টা এবং তিন দূষকের ২৪ ঘণ্টার গড় লাগে।
কর্মকর্তারা আউটেজের কারণ সার্ভার সমস্যা বলেন। এটি সারা দেশের স্টেশনকে প্রভাবিত করে। বিকেল সাড়ে ৫টায় ভারতের ৫৬২টি স্টেশনের মধ্যে মাত্র চারটি ডেটা পাঠাচ্ছিল। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ৬৬টি, রাত ৮টায় অর্ধেক। দিল্লির বুলেটিন রাত ৯টার পরও প্রকাশিত হয়নি।
এক কর্মকর্তা বলেন, এটি শুধু দিল্লির নয়, সারা দেশের। স্টেশনগুলো কাজ করছে, ডেটা পাঠাতে সমস্যা।
কমিশন ফর এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট (সিএকিউএম) কর্মকর্তা জানান, সিপিসিবি’কে ডেটা সমস্যা দ্রুত সমাধানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবু সিএকিউএম বিবৃতি দিয়ে সতর্কতার কথা বলে। দিল্লি-এনসিআরের একিউআই পর্যবেক্ষণ করছে এবং সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করছে। উন্নয়ন ধরে রাখতে চায়।
দৃশ্যমান অবস্থা সত্ত্বেও স্টেজ ৩ নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। সেক্টরভিত্তিক পদক্ষেপ পর্যালোচনা করছে বলে বিবৃতিতে জানায়। ডেটা না থাকলে কীভাবে পর্যালোচনা হয়, তা উল্লেখ করে না।
রবিবার ইন্ডিয়া গেটে দূষণ প্রতিবাদে অনুমতি ছাড়া জমায়েতের জন্য পুলিশ ৬০-৮০ জনকে আটক করে। সকাল ১০টায় একিউআই ৩৯১ ছিল। অবনতির কারণে সিএকিউএম জরুরি বৈঠক করে, কিন্তু কঠোর পদক্ষেপ নেয়নি।
পরিবেশ বিশ্লেষকরা এতে বিদ্রূপ দেখছেন।
পরিবেশকর্মী ভিমলেন্দু ঝা (রবিবার আটকদের একজন) বলেন, দূষণ স্বীকার না করে ডেটা লুকানো কর্তৃপক্ষের নির্লজ্জতা। একিউআই ডেটা লুকানো হতাশা বাড়াচ্ছে। গ্র্যাপ ব্যান্ডেড সলিউশন, কিন্তু স্টেজ ৩-৪ জারির জন্য ডেটা লাগে। ভুল স্বীকার না করে স্বচ্ছতা না দেখানো অহংকার। স্টেশনগুলোতে জল ছিটানোর পরও রাজ্য সরকার দিনদুপুরে তা করছে। এজন্য মানুষ প্রতিবাদ করছে।
এনভায়রোক্যাটালিস্টের সুনীল দাহিয়া বলেন, ডেটা না থাকলেও অবস্থা ভয়াবহ। দৃশ্যমানভাবে অত্যন্ত দূষিত দিন। সময়মতো ডেটা না থাকলে গ্র্যাপ জারি সহ তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া যায় না। ডেটা লুকানো বিভ্রান্তি বাড়ায়।
এই মৌসুমে দূষণ বাড়ার সময় এটি তৃতীয় বড় ডেটা আউটেজ। ২৬ অক্টোবর দুপুর থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ১১ ঘণ্টা আপডেট বন্ধ ছিল। বুলেটিন ৪টার পরিবর্তে রাত সাড়ে ১০টায় প্রকাশিত হয়। পরদিন আরও ১২ ঘণ্টা ব্ল্যাকআউটের পর সিপিসিবি সমস্যা সমাধানের কথা জানায়।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
