প্রকাশিত: ২৫ মে ২০২৫, ২:১৫ এএম
সিলেট প্রতিবেদক
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিধন্য কুমিল্লা শহরে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘নজরুল ইনস্টিটিউট কুমিল্লা কেন্দ্র’। এক যুগ পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি থেকে প্রকাশিত হয়নি কোনো গবেষণা গ্রন্থ কিংবা নির্ভরযোগ্য প্রকাশনা।
যেখানে নজরুলের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় যেমন প্রেম, গ্রেফতার, এবং জনপ্রিয় কবিতা-গান রচনার স্থান কুমিল্লা, সেখানে তার নামে প্রতিষ্ঠিত একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান এতটা নিষ্ক্রিয় থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় নজরুল গবেষক ও সংস্কৃতিকর্মীরা।
স্থানীয় গবেষকরা বলেন, “এই ইনস্টিটিউটে নজরুল সংগীতের মৌলিক চর্চা নেই, গবেষণার তো প্রশ্নই ওঠে না। কিছু শিশু গান শিখছে, তবে সেটা নজরুল সঙ্গীতের আদর্শ রীতিনীতির বাইরে।”
একজন গবেষক মন্তব্য করেন, “গবেষণা, প্রকাশনা সবই একেবারে শূন্য। এটা কারও গাফিলতি, নাকি প্রশাসনিক অবহেলা বোঝা মুশকিল।”
উল্লেখ্য, ১৯২১ থেকে ১৯২৪ সালের মধ্যে পাঁচ দফায় কুমিল্লায় অবস্থান করেন কাজী নজরুল ইসলাম। এখানে তিনি গ্রেফতার হন, প্রেমে পড়েন এবং বিয়েও করেন। মুরাদনগরের দৌলতপুরে মাত্র ৭৩ দিনে রচনা করেন ১৬০টি গান এবং ১২০টি কবিতা।
এই ইতিহাস সংরক্ষণ ও গবেষণার উদ্দেশ্যে স্থাপিত হয় নজরুল ইনস্টিটিউট কুমিল্লা কেন্দ্র। তিনতলা ভবনে রয়েছে লাইব্রেরি, চর্চাকেন্দ্র, মিলনায়তন ও আবাসন কক্ষ। কিন্তু এগুলোর কার্যকর ব্যবহার চোখে পড়ে না।
প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বাজেট স্বল্পতা ও কেন্দ্রের অগ্রাধিকারের ঘাটতির কারণ তুলে ধরা হলেও গবেষকরা মনে করেন মূল সমস্যা হলো আন্তরিকতার অভাব।
তবে সাম্প্রতিক প্রতিক্রিয়ায় ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, “আমরা নজরুলের কুমিল্লা পর্ব নিয়ে আলাদা গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশের জন্য নতুনভাবে উদ্যোগ নিতে যাচ্ছি। যদি মানসম্পন্ন পান্ডুলিপি পাওয়া যায়, তা প্রকাশের ব্যবস্থা করা হবে।”
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও ঢাকার কেন্দ্রীয় নজরুল ইনস্টিটিউটের সহায়তায় কুমিল্লা ইনস্টিটিউটকে একটি পূর্ণাঙ্গ গবেষণা ও প্রকাশনার কেন্দ্রে রূপান্তরিত করার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এখন সময় হয়েছে জাতীয় কবির কুমিল্লা অধ্যায়কে যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও মূল্যায়নের। তা না হলে স্থাপনার চাকচিক্যের আড়ালে নজরুল ইনস্টিটিউট কুমিল্লা কেন্দ্র রয়ে যাবে একটি নিষ্প্রাণ প্রতিষ্ঠান হিসেবেই।