বিশ্বজুড়ে সংঘাত এবং সহিংসতা গত দুই দশকে তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে দারিদ্র্য ও খাদ্য নিরাপত্তার ওপর। শুক্রবার প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংঘাতপূর্ণ ও অস্থিতিশীল এলাকাগুলো এখন বৈশ্বিক দারিদ্র্য এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। চলতি বছর প্রায় ৪২১ মিলিয়ন মানুষ দৈনিক তিন ডলারেরও কম আয়ে জীবনযাপন করছে। এ সংখ্যা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪৩৫ মিলিয়নে পৌঁছাতে পারে।
বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রধান অর্থনীতিবিদ ইন্দরমিত গিল জানান, গত তিন বছর ধরে ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতকে ঘিরে বিশ্বব্যাপী মনোযোগ থাকলেও, বর্তমানে যেসব দেশ সংঘাত বা অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তার অর্ধেকের বেশি গত ১৫ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে এই পরিস্থিতির ভেতর রয়েছে।
বর্তমানে ৩৯টি অর্থনীতিকে সংঘাত বা অস্থিরতাপূর্ণ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২১টি দেশে সক্রিয় সংঘাত চলছে। ইউক্রেন, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান, পশ্চিম তীর ও গাজা, ইরাক—এই তালিকায় রয়েছে, তবে ইরান নেই।
বিশ্বব্যাংক বলছে, সংঘাত প্রতিরোধে আগাম হস্তক্ষেপ অত্যন্ত কার্যকর এবং তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী। দেরিতে ব্যবস্থা নিলে ক্ষয়ক্ষতি অনেক গুণ বেড়ে যায়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এসব সংঘাতপূর্ণ দেশের অনেকগুলোর রয়েছে খনিজ সম্পদের বিপুল সম্ভার। বিশেষ করে জিম্বাবুয়ে, মোজাম্বিক ও কঙ্গোতে থাকা খনিজ পদার্থ বিদ্যুৎচালিত যানবাহন ও সৌর প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত হতে পারে। এই সম্পদ উন্নয়নে ব্যবহার করা গেলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।
বিশ্বব্যাংকের ডেপুটি চিফ ইকোনমিস্ট আয়হান কোসে বলেন, গত দেড় দশকে সংঘাতে জর্জরিত অর্থনীতিগুলোর জন্য স্থবিরতা ছিল সাধারণ বিষয়। প্রবৃদ্ধি ছিল না বললেই চলে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, প্রতি দশ লাখ মানুষের মধ্যে ১৫০ জনের বেশি প্রাণহানি ঘটে এমন উচ্চমাত্রার সংঘাতগুলো সাধারণত পাঁচ বছরের মধ্যে মাথাপিছু জিডিপিতে প্রায় ২০ শতাংশ হ্রাস ঘটায়।
বিশ্বব্যাংক এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও সমন্বিত, আগাম পরিকল্পিত ও টেকসই হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে, যাতে দারিদ্র্য ও সহিংসতার এই দুষ্টচক্র থেকে মানুষকে বের করে আনা যায়।