জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভ্যন্তরীণ অভিবাসন এবং নগরজীবনের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে বুধবার ঢাকায় জাতীয় পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কারিতাস বাংলাদেশ এই সভার আয়োজন করে। রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সকাল ১১টায় এ সভা শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কারিতাস বাংলাদেশের প্রোগ্রাম পরিচালক দাউদ জীবন দাস, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক সোহরাব হাসান, ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল, সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা।
সভাটি সঞ্চালনা করেন কারিতাস বাংলাদেশের অ্যাডভোকেসি পরামর্শক ড. জামিল আহমেদ।
প্রধান আলোচক দাউদ জীবন দাস বলেন, “কারিতাস দীর্ঘদিন ধরে জলবায়ু দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন ও ঝুঁকি হ্রাসে কাজ করে যাচ্ছে।” তিনি অভ্যন্তরীণ অভিবাসন মোকাবেলায় এনজিওদের কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করতে গণমাধ্যমের সহযোগিতা চান।
তিনি জানান, এখন পর্যন্ত কারিতাস বাংলাদেশ প্রায় এক কোটি ঘর নির্মাণ, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও কমিউনিটি অবকাঠামো গড়ে তোলার মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সহায়তা দিয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ৩ হাজার কমিটি ও ১৪ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রশিক্ষণ দিয়েছে সংস্থাটি। উপকূল ও বন্যা প্রবণ এলাকাগুলোর জন্য নির্মাণ করেছে ৩২৯টি সাইক্লোন ও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান আলেক্সান্ডার ত্রিপুরা খুলনার ঘূর্ণিঝড় আইলার ক্ষতিগ্রস্ত নারীর জীবনের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বলেন, “সঠিক নগর পরিকল্পনার অভাবে শহরেও বাস্তুচ্যুতদের জন্য আবাসন ও জীবিকা সংকট গভীর হচ্ছে।”
প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক সোহরাব হাসান জলবায়ু বিষয়ক সাংবাদিকদের একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের প্রস্তাব দেন। তিনি জানান, প্রতি বছর ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হন, যার বড় অংশ চলে আসে শহরে। ফলে শহরগুলোর চাপ বাড়ছে।
ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারি উদ্যোগ বাস্তবায়নে জোর দেন। তিনি বলেন, “স্থানীয় সংকট অনুযায়ী জীবিকা কেন্দ্রিক সমাধান জরুরি।”
টেলিভিশন সাংবাদিক জেসমিন জাহান বলেন, “দুর্যোগে বাস্তুচ্যুতদের পুনর্বাসনে গবেষণা-ভিত্তিক যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন।” কালের কণ্ঠের সাংবাদিক নিখিল চন্দ্র ভদ্র বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনে দুর্যোগ ও অভিবাসন সংকট বেড়েছে। এসব বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ দরকার।”
নারী সাংবাদিক সমিতির সভাপতি নাসিমা বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনে কৃষিতে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে, কৃষকরা শহরে চলে আসছেন। নারীরা এ সংকটে সবচেয়ে ঝুঁকিতে।”
সভায় অংশগ্রহণকারী সবাই সম্মিলিত উদ্যোগ ও কার্যকর পরিকল্পনার মাধ্যমে জলবায়ু সংকট ও অভিবাসন সমস্যা সমাধানে আহ্বান জানান।