জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলোতে অভ্যন্তরীণ অভিবাসন ও স্বাস্থ্যসেবায় বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটছে বলে সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে আরও টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করা জরুরি।
ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ (ব্র্যাক জেপিজিএসপিএইচ), ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত এই গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয় ১৬ জুলাই ঢাকার ব্র্যাক সেন্টার ইন-এ আয়োজিত এক কর্মশালায়।
‘জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্যব্যবস্থার টেকসইতা ও কর্মপরিকল্পনা’ শীর্ষক এ কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয় ‘ক্লাইমএইচবি’ প্রকল্পের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের লক্ষ্যে, যা হাইতি ও বাংলাদেশের নির্বাচিত এলাকায় পরিচালিত হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে ব্র্যাকের ‘সেন্টার অব এক্সেলেন্স ফর সায়েন্স অব ইমপ্লিমেন্টেশন অ্যান্ড স্কেল-আপ (CoE-SISU)’।
গবেষণায় সাতক্ষীরার তালা উপজেলা ও হাইতির অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের সময় মানুষেরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে না গিয়ে বিকল্প পন্থা অবলম্বন করে। ব্যয়, দূরত্ব এবং সেবার মান নিয়ে সন্দেহই এর মূল কারণ।
অন্যদিকে, সেবা প্রদানকারী পক্ষেও থাকে নানা সীমাবদ্ধতা। দুর্যোগকালে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও জনবল সংকটে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হয়।
গবেষণায় লেভেস্ক ফ্রেমওয়ার্ক ও ইউকে ডিএফআইডি রেজিলিয়েন্স কাঠামোর সংমিশ্রণে একটি নতুন ধারণাগত মডেল তৈরি করা হয়, যা স্বাস্থ্যব্যবস্থার টেকসইতা ও জবাবদিহি উন্নয়নে সহায়ক হবে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কর্মশালার সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাক জেপিজিএসপিএইচ-এর ডিন ও CoE-SISU-এর পরিচালক লরা রেইচেনব্যাচ। তিনি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্য এবং জনসংখ্যা স্থানান্তর—এই তিনটির সংযোগ বোঝার জন্য একটি সিস্টেমেটিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। ক্লাইমএইচবি মডেল সেই ধারণা দেয়।”
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আশরাফি আহমাদ বলেন, “স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে জলবায়ু সহনশীল করতে হলে শুধু অবকাঠামো নয়, বরং বাল্যবিবাহ ও অনিয়ন্ত্রিত গর্ভধারণের মতো সামাজিক দুর্বলতাও দূর করতে হবে।”
তিনি জানান, সরকার অংশীদারদের সঙ্গে মিলে সবার জন্য সমতাভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক শেখ সাইদুল হক।
ক্লাইমএইচবি প্রকল্পের এই গবেষণা জলবায়ু পরিবর্তন ও অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির প্রেক্ষাপটে টেকসই স্বাস্থ্যনীতি নির্ধারণে জাতীয় ও বৈশ্বিক আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।