Monday, September 1, 2025
Homeজাতীয়চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষে শতাধিক আহত, দেশজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষে শতাধিক আহত, দেশজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা

ছাত্রী লাঞ্ছনার ঘটনায় উত্তেজনা, সেনা মোতায়েন; রাবি, বাউয়েট ও বাউয়েতেও আন্দোলন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রী লাঞ্ছনার জেরে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষে রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দুই দিনে এ ঘটনায় শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সাংবাদিক ও কর্মকর্তাসহ তিন শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ৬০ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সাফিয়া খাতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকার ভাড়া বাসায় ফিরছিলেন। রাত হয়ে যাওয়ায় গৃহকর্তার প্রহরী দরজা খুলতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে তাকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। সহপাঠীরা ঘটনাস্থলে গেলে প্রহরী পালিয়ে যায়। এ সময় স্থানীয় কিছু লোকজন ও রাজনৈতিক ক্যাডার শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়।

লোহার রড, দা ও লাঠিসহ ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে চালানো এ হামলায় রক্তাক্ত অবস্থায় অনেক শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। চবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক কামাল উদ্দিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে অভিযোগ করেন, “আমার শিক্ষার্থীদের হেলমেটধারী ক্যাডাররা নির্মমভাবে মারধর করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ছিল দেরিতে।”

অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনতে শনিবার গভীর রাতে এবং রবিবার বিকেলে সেনা মোতায়েন করা হয়। তবুও দুপুরে আবারও সংঘর্ষ শুরু হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিকেলে সেনাবাহিনী যৌথ অভিযান চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আহসান হাবিব পলাশ বলেন, “তুচ্ছ ঘটনা থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছে। কিছু মহল ইস্যুটি কাজে লাগিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করছে।” ঘটনাস্থল ও আশপাশে রোববার সন্ধ্যা থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়, যা সোমবার মধ্যরাত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

শুধু চবিতেই নয়, দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের ভোটার তালিকাভুক্ত করার দাবিতে রবিবার সকালে রাবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের কার্যালয় তালাবদ্ধ করে দেয়। এতে আসন্ন নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণ বন্ধ হয়ে যায়।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল হাসব্যান্ড্রি অনুষদের শিক্ষার্থীরা পাঁচ ঘণ্টা ধরে উপাচার্যসহ ২০০ শিক্ষককে অবরুদ্ধ রাখে। তারা সমন্বিত বিএসসি ডিগ্রির দাবি তোলে। কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থীরা নতুন কর্মসংস্থান ও কৃষি স্নাতকদের স্বীকৃতির দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথ পাঁচ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) বৃহস্পতিবার থেকে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবিতে আন্দোলন চালাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রকৌশল সেবায় মেধাভিত্তিক নিয়োগ, কোটাভিত্তিক পদোন্নতি বাতিল এবং প্রকৌশল স্বীকৃতি নিয়ন্ত্রণে বিধি প্রণয়ন।

শিক্ষাঙ্গনের এসব পরিস্থিতি শিক্ষা কার্যক্রমে বড় ধরনের ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, জাতীয় রাজনীতির উত্তেজনা ও বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী পক্ষের হস্তক্ষেপ অস্থিরতাকে বাড়িয়ে তুলছে।

RELATED NEWS

Latest News