Friday, July 18, 2025
Homeআন্তর্জাতিকচিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে পদদলিত হয়ে ১১ জনের মৃত্যু: আয়োজক ও পুলিশ কর্মকর্তারা দায়ী

চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে পদদলিত হয়ে ১১ জনের মৃত্যু: আয়োজক ও পুলিশ কর্মকর্তারা দায়ী

বিচার বিভাগীয় তদন্তে রায়ল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের বিজয় শোভাযাত্রার অনুমতিহীন আয়োজন ও পুলিশের গাফিলতির ইঙ্গিত

চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে আরসিবির বিজয় শোভাযাত্রায় পদদলিত হয়ে ১১ জনের মৃত্যুর ঘটনায় আয়োজক প্রতিষ্ঠান ও উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের দায়ী করেছে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন। ৪ জুনের এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আরও ৫০ জনের বেশি আহত হন।

ন্যায়মূর্তি জন মাইকেল কুনহার নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রায়ল চ্যালেঞ্জার্স স্পোর্টস প্রাইভেট লিমিটেড (RCB), ডিএনএ এন্টারটেইনমেন্ট নেটওয়ার্কস প্রাইভেট লিমিটেড এবং কর্ণাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (KSCA) যথাযথ অনুমতি ও লাইসেন্স ছাড়াই জনসমাগমপূর্ণ অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছিল।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, “আয়োজকদের উচিত ছিল আগেভাগেই প্রয়োজনীয় অনুমতি ও লাইসেন্স নেওয়া, কিন্তু তারা তা করেননি এবং নিয়ম অনুসরণেও ব্যর্থ হন।”

তদন্তে উঠে আসে, আয়োজকরা জানতেন অনুষ্ঠানটির কোনো নিরাপত্তা অনুমোদন নেই, তবুও সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তারা তা চালিয়ে যেতে দেন। যাদের নাম উঠে এসেছে তাদের মধ্যে রয়েছেন তৎকালীন পুলিশ কমিশনার বি দয়ানন্দ, পশ্চিম বেঙ্গালুরুর অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বিকাশ কুমার বিকাশ, সেন্ট্রাল ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনার এইচ টি শেখর ও কাব্বন পার্ক এলাকার সহকারী কমিশনার সি বালকৃষ্ণ।

কমিশনের মতে, “আয়োজকদের অসচেতন ও দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যবস্থাপনাই এই দুর্ঘটনার মূল কারণ। প্রবেশদ্বারে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ না করা এবং অবিবেচনাপ্রসূত ঘোষণা পদদলনের কারণ হয়েছে।”

ঘটনার দিন সকালে সামাজিক মাধ্যমে ফ্যানদের আহ্বান জানিয়ে আরসিবির পক্ষ থেকে পোস্ট দেওয়া হয়। কিন্তু তাতে প্রবেশ প্রক্রিয়া স্পষ্ট ছিল না এবং গেটের সামনে জনজট শুরু হলেও কোনো দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

প্রতিবেদন আরও জানায়, “পুলিশ কর্মকর্তারা নিজেরাই অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে ব্যস্ত ছিলেন এবং আয়োজকদের সঙ্গে এক ধরনের সমঝোতা ও ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।”

তদন্তে স্টেডিয়ামের স্থাপত্যকেও অনিরাপদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। “সমস্ত প্রবেশ ও প্রস্থান গেট সরাসরি ফুটপাতে খোলে এবং কোনো সংগঠিত হোল্ডিং এরিয়া ছিল না,” রিপোর্টে বলা হয়।

সঙ্কট আরও বাড়িয়েছিল বিভ্রান্তিকর শেষ মুহূর্তের ঘোষণা, অপর্যাপ্ত ব্যারিকেড, সংকীর্ণ গেট ও নিরাপত্তা ও চিকিৎসা দলের অপর্যাপ্ত উপস্থিতি। ৫১৫ জনের মধ্যে মাত্র ৭৯ জন কর্মী গেট এলাকায় নিয়োজিত ছিলেন। অ্যাম্বুলেন্স গুলো স্টেডিয়াম থেকে অনেক দূরে ছিল, আশেপাশে ছিল না কোনো ক্যাজুয়ালটি রিসেপশন বা জরুরি চিকিৎসা কেন্দ্র।

কমিশন স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছে, “সমন্বিত বার্তা এবং নির্ভরযোগ্য আপডেটের অভাব জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা ডেকে আনে এবং গেট এলাকায় হঠাৎ ভিড়ের সূত্রপাত ঘটায়।”

ন্যায়মূর্তি কুনহা প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন কেএসসিএ-র সভাপতি রঘুরাম ভাট ও আরসিবি ও ডিএনএ এন্টারটেইনমেন্টের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা।

তদন্তে ভবিষ্যতের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে যে, এই ধরনের গণজমায়েত অনুষ্ঠান যেন অবকাঠামোগত নিরাপত্তা ছাড়া অনুমতি না পায়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, “যতদিন পর্যন্ত যথাযথ অবকাঠামো গড়ে না ওঠে, ততদিন এই স্টেডিয়ামে উচ্চ উপস্থিতির অনুষ্ঠান চালিয়ে যাওয়া জননিরাপত্তা, শহরের চলাচল ও জরুরি সেবা ব্যবস্থার জন্য অগ্রহণযোগ্য ঝুঁকি বহন করবে।”

এ ঘটনায় এখনো ক্ষোভ দমে না যাওয়ায়, প্রশাসনের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপের দিকে দৃষ্টি রাখছে জনসাধারণ।

  • বিষয়াদি সম্পর্কে আরও পড়ুন:
  • ভারত

RELATED NEWS

Latest News