চীন ঘোষণা করেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজের ওপর আরোপিত ‘বিশেষ পোর্ট ফি’ এক বছরের জন্য স্থগিত রাখবে। যুক্তরাষ্ট্রও একইভাবে চীনা জাহাজের ওপর শুল্ক কার্যক্রম স্থগিত করেছে। দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক বাণিজ্যিক সমঝোতার অংশ হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত এসেছে।
চীনের পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ১ মিনিট (০৫:০১ জিএমটি) থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। এই ফি মূলত মার্কিন নির্মিত বা পরিচালিত জাহাজগুলোর জন্য প্রযোজ্য ছিল, যারা চীনা বন্দরে ভিড়ত।
গত কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে শুল্ক ও বাণিজ্য যুদ্ধ চলছিল। দুই দেশের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের দক্ষিণ কোরিয়ায় বৈঠকের পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।
উভয় পক্ষের শুল্ক এক পর্যায়ে তিন অঙ্কে পৌঁছেছিল, যা বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল ও বাণিজ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, যুক্তরাষ্ট্র চীনা জাহাজের ওপর আরোপিত ফি স্থগিত করায়, চীনও পারস্পরিক পদক্ষেপ হিসেবে মার্কিন জাহাজের ওপর একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এছাড়া চীন ঘোষণা করেছে, দক্ষিণ কোরিয়ার জাহাজ নির্মাতা হানহওয়া ওশানের পাঁচটি মার্কিন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাও এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত ১০ নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে।
চীন জানিয়েছে, এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবে নেওয়া হয়েছে। আগে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তারা যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেকশন ৩০১’ তদন্তে সহযোগিতা করেছে, যেখানে চীনের জাহাজ নির্মাণ শিল্পের প্রভাবকে ‘অযৌক্তিক’ বলা হয়েছিল।
এদিকে, চীন এক বছরের জন্য ওই তদন্ত স্থগিত করেছে, যাতে দেখা যাচ্ছিল তদন্তটি দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পের নিরাপত্তা ও উন্নয়নে কোনো প্রভাব ফেলছে কি না।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা আশা করি যুক্তরাষ্ট্রও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে এবং বৈশ্বিক জাহাজ ও শিপবিল্ডিং বাজারে ন্যায্য প্রতিযোগিতা বজায় রাখতে একসঙ্গে কাজ করবে।”
একই দিনে চীন আরও ঘোষণা করে, ফেন্টানিল তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত এক ডজনের বেশি রাসায়নিক উপাদান যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডায় রপ্তানির ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে, চীন এসব রাসায়নিকের প্রবাহ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফেন্টানিল যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ মাদক সংকটের অন্যতম কারণ।
সম্প্রতি ওয়াশিংটন জানিয়েছিল, বেইজিং উত্তর আমেরিকায় নির্দিষ্ট কিছু রাসায়নিকের চালান বন্ধ করতে রাজি হয়েছে, যা ফেন্টানিল নিয়ন্ত্রণে বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
শুল্ক ছাড়ের পাশাপাশি চীন আরও জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক এক বছরের জন্য স্থগিত থাকবে। সয়াবিনসহ কিছু কৃষিপণ্যেও শুল্ক শিথিল করা হয়েছে।
এছাড়া প্রযুক্তি শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ধাতু যেমন গ্যালিয়াম, জার্মেনিয়াম ও অ্যান্টিমনির রপ্তানি নিষেধাজ্ঞাও এক বছরের জন্য স্থগিত করেছে চীন। একইভাবে বিরল মাটি প্রযুক্তির রপ্তানিতে থাকা সীমাবদ্ধতাও তুলে নেওয়া হয়েছে।
বাণিজ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপগুলো সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের বরফ গলানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে। দুই পরাশক্তির অর্থনৈতিক সমন্বয় বৈশ্বিক বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে সহায়ক হতে পারে।
