চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লায়েন। বেইজিংয়ে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে একদিনের শীর্ষ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ভন ডার লায়েন বলেন, “আমাদের সহযোগিতা যত গভীর হয়েছে, ভারসাম্যের অভাবও তত বেড়েছে।” ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিপুল বাণিজ্য ঘাটতির কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “রাশিয়ার সঙ্গে চীনের সম্পর্কই এখন ইইউ-চীন সম্পর্কে প্রধান নির্ধারক হয়ে উঠেছে।”
জবাবে শি জিনপিং বলেন, “ইউরোপের বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলোর উৎস চীন নয়।” তিনি ইইউ নেতাদের উদ্দেশে পারস্পরিক আস্থা ও মতপার্থক্য সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনার আহ্বান জানান।
এ সম্মেলনটি প্রথমে দুই দিনের হওয়ার কথা থাকলেও চীনের অনুরোধে তা একদিনে সীমিত করা হয়। তাতেও বড় কোনও অগ্রগতির আশা ছিল না বলে জানিয়েছে ইইউর কূটনৈতিক মহল।
চীনের সঙ্গে ইউরোপের সবচেয়ে বড় অমিলগুলোর মধ্যে রয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ। চীন এখনও রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখছে। ভন ডার লায়েন বলেন, “চীন কীভাবে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক রাখে, সেটাই আমাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নির্ধারণ করবে।”
সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন দুটি চীনা ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে রাশিয়াকে সহায়তা করার অভিযোগে, যা বেইজিংকে ক্ষুব্ধ করেছে। চীন বলেছে, তারা ইউরোপীয় বাণিজ্য প্রধানকে কঠোরভাবে আপত্তি জানিয়েছে।
তাছাড়া ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর জন্য চীনের বাজারে প্রবেশাধিকারে নানা প্রতিবন্ধকতা, চীনের শিল্পখাতে অতিরিক্ত উৎপাদন এবং চীনা বৈদ্যুতিক যানবাহনে ইইউর শুল্ক আরোপ নিয়েও দুই পক্ষের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে।
ভন ডার লায়েন বলেন, “আমাদের প্রকৃত সমাধানে পৌঁছাতে হবে, যার মধ্যে ইউরোপীয় কোম্পানির জন্য চীনা বাজার উন্মুক্ত করা, রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে ভারসাম্য আনা এবং উৎপাদন অতিরিক্ততার প্রভাব কমানো অন্তর্ভুক্ত।”
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্মেলনের পরে জানায়, তারা রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক আলোচনায় আগ্রহী এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যেতে প্রস্তুত।
এই বৈঠকে ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তাও উপস্থিত ছিলেন। দুই পক্ষই একে ভবিষ্যতের জন্য “পারস্পরিক সহযোগিতার নতুন অধ্যায়” হিসেবে অভিহিত করে।
তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মার্কিন প্রভাবের কারণে ইইউ-চীন সম্পর্ক বর্তমানে ‘কৌশলগত অবিশ্বাসের’ আবহে ঢুকে পড়েছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের চীন বিষয়ক প্রতিনিধি দলের চেয়ারম্যান এঙ্গিন এরোগলু বলেন, “এই মুহূর্তে সম্পর্কের পরিবেশ বেশ ঠান্ডা, এমনকি উত্তপ্তও বলা চলে।”
সামগ্রিকভাবে, শীর্ষ সম্মেলনটি দুই পক্ষের উদ্বেগ প্রকাশ ও ভবিষ্যতের সহযোগিতার ইঙ্গিত দেওয়ার মধ্য দিয়েই শেষ হয়েছে। তবে কীভাবে পারস্পরিক আস্থা ফিরিয়ে আনা যাবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।