দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ান এবং চীন তাদের মধ্যকার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) আপগ্রেড করতে একটি নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। মঙ্গলবার চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই তথ্য নিশ্চিত করে। নতুন এই সংস্করণে ডিজিটাল অর্থনীতি, সবুজ অর্থনীতি এবং অন্যান্য উদীয়মান শিল্পখাত অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা উভয় পক্ষের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আসিয়ান পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১১ সদস্যের এই জোটটি চীনের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। গত বছর দুই পক্ষের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৭৭ হাজার ১০০ কোটি (৭৭১ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার। আসিয়ানের সম্মিলিত জিডিপির পরিমাণ প্রায় ৩.৮ ট্রিলিয়ন ডলার, যা এই অঞ্চলকে চীনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত আমদানি শুল্কের প্রভাব মোকাবিলা এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যে নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে চীন আসিয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার দিকে মনোযোগ দিয়েছে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, “আপগ্রেড করা এই চুক্তি বহুপাক্ষিকতাবাদ এবং মুক্ত বাণিজ্যকে সমর্থন করার জন্য উভয় পক্ষের দৃঢ় প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।”
বেইজিং নিজেকে একটি উন্মুক্ত অর্থনীতির দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও বিরল মৃত্তিকা (rare earths) এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপের কারণে প্রধান অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর সমালোচনার মুখে পড়েছে দেশটি।
চীন ও আসিয়ানের মধ্যকার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির এই নতুন সংস্করণটি “ভার্সন ৩.০” নামে পরিচিত। মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত আসিয়ান নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে এটি স্বাক্ষরিত হয়। এই আপগ্রেড চুক্তির জন্য আলোচনা ২০২২ সালের নভেম্বরে শুরু হয়েছিল এবং চলতি বছরের মে মাসে শেষ হয়। উল্লেখ্য, দুই পক্ষের মধ্যে প্রথম মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিটি ২০১০ সালে কার্যকর হয়েছিল।
আরো পড়ুন | জাপানের প্রধানমন্ত্রী তাকাইচির সঙ্গে ট্রাম্পের সাক্ষাৎ: “নতুন স্বর্ণযুগের” প্রতিশ্রুতি ও খনিজ চুক্তি স্বাক্ষর
চীন এর আগে জানিয়েছিল, এই চুক্তির ফলে কৃষি, ডিজিটাল অর্থনীতি এবং ফার্মাসিউটিক্যালসের মতো খাতে আসিয়ান দেশগুলোর জন্য চীনা বাজারে প্রবেশাধিকার আরও সহজ হবে।
চীন এবং আসিয়ান উভয়ই বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্লক রিজিওনাল কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপের (RCEP) সদস্য। এই ব্লকটি বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জনসংখ্যা এবং ৩০ শতাংশ জিডিপি নিয়ন্ত্রণ করে।
বৈশ্বিক বাণিজ্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে চীনের এই উদ্যোগ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্ককে “সংরক্ষণবাদ” হিসেবে আখ্যা দিয়ে আসছে। সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় ইস্ট এশিয়া সামিটে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াং মুক্ত বাণিজ্যের গুরুত্বের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, “বিশ্বকে অবশ্যই সেই জঙ্গলের আইনে ফিরে যাওয়া উচিত নয়, যেখানে শক্তিশালীরা দুর্বলদের শিকার করে।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের একটি উচ্চ মানের আঞ্চলিক মুক্ত বাণিজ্য নেটওয়ার্ক তৈরি করা উচিত এবং আঞ্চলিক একীকরণে কার্যকরভাবে অগ্রসর হওয়া উচিত।”
