১১ আগস্ট ২০২৪ থেকে বাংলাদেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করছেন সৈয়দ রিফাত আহমেদ। তার নেতৃত্বে এক বছরে বিচার ব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কার শুরু হয়েছে। শুধু নীতিগত পরিবর্তনই নয়, বাস্তবায়নে সুস্পষ্ট অগ্রগতি লক্ষণীয় হয়েছে।
তিনি স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, দক্ষতা ও প্রযুক্তি সমন্বয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে বিচার বিভাগের উন্নয়নের রোডম্যাপ ঘোষণা করে বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বেশ কিছু নির্দেশনা দেন।
মাসদার হোসেন মামলার রায়ের বাস্তবায়নে আলাদা বিচারসচিবালয় গঠনের প্রস্তাব পাঠানোসহ, বিচার বিভাগের জন্য স্বতন্ত্র ও পর্যাপ্ত বাজেটের দাবি এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
অপরাধ ও ন্যায্য বিচার নিশ্চিত করতে সাব-অর্ডিনেট কোর্টে উপযুক্ত আইনগত সহায়তা নিশ্চিতকরণে ২৫ আগস্ট ২০২৪ একটি সার্কুলার জারি হয়, যা ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে।
প্রধান বিচারপতির উদ্যোগে হাইকোর্টের কোম্পানি বেঞ্চে ২০২৫ সালের শুরু থেকে সম্পূর্ণ কাগজবিহীন বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ধাপে ধাপে এই পদ্ধতি অন্যান্য বেঞ্চেও বিস্তৃত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
অতিরিক্তভাবে, ২০ অক্টোবর ২০২৪ থেকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনরায় কার্যক্রম শুরু করেছে। প্রধান বিচারপতি এই তিন সদস্যবিশিষ্ট কাউন্সিলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
২০২৫ সালের ৭ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পুনর্নির্মিত ভবন উদ্বোধন করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, এটি বিচার ব্যবস্থায় একটি নতুন যুগের সূচনা।
দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে সারা বছর ইউএনডিপির সহায়তায় আয়োজিত স্টেকহোল্ডার সভাগুলো বিচার ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
২০২৫ সালের ২২ জুন “বাংলাদেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও দক্ষতা” শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে প্রধান বিচারপতি এবং প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুসসহ আইন ও বিচার অঙ্গনের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান বিচারপতির নির্দেশনায় চলতি বছর বিচার বিভাগের পৃথক সিভিল ও ক্রিমিনাল কোর্ট গঠন এবং বিচারিক বিভাগীয় কাঠামো পরিবর্তনের প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এই পদক্ষেপ মামলার দীর্ঘস্থায়ী বিলম্ব দূর করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দেশের দূরবর্তী অঞ্চলগুলোর চৌকি কোর্টগুলোতে ৭১টি ডেস্কটপ কম্পিউটার সরবরাহ করা হয়েছে। গত এক বছরে জেলা আদালতে ৪০০টি ডেস্কটপ ও ১২০জন বিচারককে ল্যাপটপ বিতরণ করেছে সুপ্রিম কোর্ট।
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে এই সকল উদ্যোগ বিচার ব্যবস্থায় জনবিশ্বাস পুনঃস্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ আরও স্বচ্ছ, কার্যকর ও জনগণের অনুকূলে পরিণত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।