Tuesday, July 8, 2025
Homeআন্তর্জাতিকব্যক্তিগত স্বাধীনতার মূল্য ভুলে যাচ্ছে বিচারব্যবস্থা: ভারতের প্রধান বিচারপতি

ব্যক্তিগত স্বাধীনতার মূল্য ভুলে যাচ্ছে বিচারব্যবস্থা: ভারতের প্রধান বিচারপতি

কোচিতে বক্তৃতায় প্রধান বিচারপতি গাভাই বললেন, “জামিন নিয়ম, জেল ব্যতিক্রম”—এই মৌলিক নীতিকে ফিরিয়ে আনতে হবে

ভারতের প্রধান বিচারপতি ভুষণ আর গাভাই রবিবার একটি স্মারক বক্তৃতায় বলেন, “জামিনই নিয়ম, জেল ব্যতিক্রম”—এই মৌলিক নীতিকে ভারতের বিচারব্যবস্থা অনেকটাই ভুলে গেছে। ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের সংবিধানিক মূল্য ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন তিনি।

কোচিতে অনুষ্ঠিত ১১তম জাস্টিস ভি আর কৃষ্ণ আইয়ার স্মারক আইন বক্তৃতা প্রদানকালে প্রধান বিচারপতি বিচার ব্যবস্থায় দীর্ঘকালীন বিচারাধীন আসামিদের কারাবন্দিত্ব এবং জামিনের ক্ষেত্রে কড়াকড়ির প্রবণতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, “সম্প্রতি এই নীতি কিছুটা ভুলে যাওয়া হয়েছে।” তিনি উল্লেখ করেন, কৃষ্ণ আইয়ারের রায়েই এই নীতি স্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে জামিনকে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অপরিহার্য অংশ হিসেবে দেখা হয়েছে।

গাভাই বলেন, ২০২৪ সালে তিনি প্রভীর পুরকায়স্থ, মণীশ সিসোদিয়া এবং কাবিতা বনাম ইডি মামলায় এই নীতির পুনরুচ্চারণ করেন। সেই রায়গুলোতে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার গুরুত্ব এবং জামিন সংক্রান্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়া হয়।

তিনি উদ্ধৃত করেন, গুড়িকান্তি নারসিমহুলু বনাম অন্ধ্র প্রদেশ সরকার (১৯৭৮) মামলার কৃষ্ণ আইয়ারের পর্যবেক্ষণ—“দরিদ্রের জন্য ভারী জামিন ভুল। দারিদ্র্য সমাজের ব্যাধি এবং তার উত্তর হতে হবে সহানুভূতি, কঠোরতা নয়।”

বিচারপতি গাভাই বলেন, বিচারকরা যেন জামিনের আবেদন বিবেচনায় বন্দিত্বের সময়কাল এবং আপিলের বিলম্বের সম্ভাবনাও বিবেচনায় নেন।

সম্প্রতি ভারতের সুপ্রিম কোর্টে জামিন শুনানি বিলম্ব, প্রক্রিয়াগত জটিলতা ও মানবিকতা বিবর্জিত বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে আসছে। এই প্রেক্ষাপটে প্রধান বিচারপতির বক্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বক্তব্যে গাভাই বলেন, “আমি কৃষ্ণ আইয়ারের বিচার দর্শন আজও অনুসরণ করি। অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলায় তার ভাবনা থেকেই প্রেরণা নেই।”

“মৌলিক অধিকার ও রাষ্ট্রের নীতিমালার ভারসাম্য রক্ষায় কৃষ্ণ আইয়ারের ভূমিকা” শীর্ষক ভাষণে গাভাই জানান, কৃষ্ণ আইয়ার ছিলেন গরিব ও বঞ্চিতদের পক্ষে সোচ্চার এক মানবাধিকারকর্মী। তিনি পরিবেশ, নাগরিক স্বাধীনতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারে ছিলেন অগ্রদূত।

গাভাই আরও বলেন, কৃষ্ণ আইয়ার মনেকা গান্ধী বনাম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া (১৯৭৮) মামলায় Article 21-এর ব্যাখ্যার মাধ্যমে জীবনের অধিকারকে প্রসারিত করেন। ফলে পরবর্তী সময়ে পানি, খাদ্য, চিকিৎসা, আশ্রয় প্রভৃতিকে জীবনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় আদালত।

বক্তব্যের শেষে গাভাই বলেন, “যখনই কোনো বেঞ্চ প্রক্রিয়াগত কঠোরতার চেয়ে ন্যায়বিচারকে গুরুত্ব দেয়, তখনই কৃষ্ণ আইয়ারের উত্তরাধিকার কেবল স্মরণ করা হয় না, বরং জীবন্ত থাকে।”

উল্লেখ্য, বিচারপতি কৃষ্ণ আইয়ার ১৯৭৩ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ভারতের সুপ্রিম কোর্টে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১৪ সালের ৪ ডিসেম্বর ১০০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

  • বিষয়াদি সম্পর্কে আরও পড়ুন:
  • ভারত

RELATED NEWS

Latest News