Tuesday, July 15, 2025
Homeজাতীয়পরিবার আদালতে জট কমাতে প্রক্রিয়াগত জটিলতা দূর করার আহ্বান প্রধান বিচারপতির

পরিবার আদালতে জট কমাতে প্রক্রিয়াগত জটিলতা দূর করার আহ্বান প্রধান বিচারপতির

ব্র্যাকের কর্মশালায় বিচারপ্রক্রিয়াকে নাগরিকবান্ধব ও সময়োপযোগী করার ওপর গুরুত্বারোপ

বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে আরও দক্ষ, মানবিক ও নাগরিকবান্ধব করতে পরিবার আদালতের প্রক্রিয়াগত জটিলতা দূর করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ।

সোমবার ঢাকার ব্র্যাক সেন্টার অডিটোরিয়ামে ব্র্যাকের সোশ্যাল এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড লিগ্যাল প্রটেকশন (SELP) প্রোগ্রাম আয়োজিত “পরিবার আদালতে সময়মত বিচার নিশ্চিত করতে প্রক্রিয়াগত জটিলতা নিরসন” শীর্ষক জাতীয় কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধান বিচারপতি বলেন, “বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা বর্তমানে একটি বিস্তৃত সংস্কার কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যার লক্ষ্য হচ্ছে দক্ষতা, জবাবদিহিতা এবং নাগরিককেন্দ্রিক সেবা বৃদ্ধি করা।”

তিনি জানান, ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে পরিবার আদালতে মোট ৭৪,২৫৯টি মামলা ঝুলে আছে, যার মধ্যে ৫,০৩৪টি মামলার নিষ্পত্তি পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে হয়নি। তবে একই সময়ে ১০,০৮৯টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে, যা বিচারক ও আইনজীবীদের সম্মিলিত উদ্যোগের ফল।

প্রধান বিচারপতি বলেন, সিভিল প্রসিডিউর কোডে সাম্প্রতিক সংশোধনীর মাধ্যমে মামলা পরিচালনার ধাপ কমানো, মূল মামলার কাঠামোর মধ্যে কার্যকরী প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত করা এবং শুনানির সংখ্যা সীমিত করার মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

তিনি ব্র্যাকের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে পাঁচটি আঞ্চলিক কর্মশালার উল্লেখ করে বলেন, “এগুলো ছিল নাগরিক অংশগ্রহণের দৃষ্টান্ত।” এসব কর্মশালায় পুরোনো সমন প্রক্রিয়া, অনিয়ন্ত্রিত স্থগিতাদেশ, দুর্বল কেস ম্যানেজমেন্ট, মানসিক সহায়তার অভাব এবং আদালতের অবকাঠামোগত দুর্বলতা চিহ্নিত করা হয়।

সুপ্রিম কোর্টে ব্র্যাকের সহায়তায় হাইজেনিক ও লিঙ্গ সংবেদনশীল টয়লেট স্থাপন এবং তা জেলা ও মহানগর আদালতে সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও তুলে ধরা হয়।

তিনি বলেন, “কোনো বিচার ব্যবস্থা নিজস্ব প্রশাসনিক কাঠামোর ওপর স্বশাসন ছাড়া সময়ানুবর্তিতা, কর্মভার বা জনবল নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।”

আপিল বিভাগের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বলেন, “পরিবার আদালতের বিচার জয়-পরাজয়ের নয়, বরং নিরাময়ের একটি প্রক্রিয়া। তাই এটি হতে হবে সহানুভূতিশীল ও দ্রুত।”

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, “ন্যায়সঙ্গত সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব তখনই, যখন প্রতিটি নারী ও মেয়ে তাদের পূর্ণ সম্ভাবনা বিকাশের সুযোগ পাবে।”

শাশ্বতী বিপ্লব বলেন, “এই কর্মশালার উদ্দেশ্য শুধু প্রক্রিয়াগত সমস্যা চিহ্নিত করা নয়, বরং বিচার ব্যবস্থায় আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং বৈষম্যহীন সমাজ গঠন করা।”

কর্মশালাটি পরিচালনা করেন ব্র্যাকের এসইএলপি প্রোগ্রামের আইনি সহায়তা ও নীতিগত অ্যাডভোকেসি বিভাগের প্রধান এটিএম মোর্শেদ আলম। এতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ১১৭ জন বিচারক ও ১০ জন আইনজীবী অংশ নেন।

আলোচকরা দীর্ঘসূত্রতা ও পুরোনো সমন প্রক্রিয়াকে বিচারপ্রাপ্তির প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেন। পরিবারের ন্যায়বিচার নিশ্চিতে সবাই সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।

RELATED NEWS

Latest News