জুলাই গণআন্দোলনে ছাত্রদলের সক্রিয় ভূমিকা পরিকল্পিতভাবে উপেক্ষা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে সংগঠনটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটোরিয়ামে মঙ্গলবার আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ অভিযোগ করেন ছাত্রদলের নেতারা।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। এতে ছাত্রদলসহ বিভিন্ন বাম-ডানপন্থী ছাত্র সংগঠন এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “ছাত্রসমাজের চেতনা ছিল আন্দোলনের কেন্দ্রে। আজ সেই চেতনাকে বিকৃত করা হচ্ছে, শহিদদের ত্যাগকে খাটো করা হচ্ছে।”
তিনি অভিযোগ করেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে যারা প্রাণ দিয়েছেন, তাদের স্বপ্ন ছিল গণতন্ত্র ও সাম্যের সমাজ। অথচ শেখ মুজিবুর রহমান চার বছরের মাথায় গণতন্ত্র বাতিল করে একদলীয় শাসন কায়েম করেন। তিনি শেখ হাসিনাকে “ডাবল ফ্যাসিস্ট” হিসেবে অভিহিত করেন এবং বলেন, বাংলাদেশ কখনোই আবার ফ্যাসিবাদের পথে ফিরতে চায় না।
সালাহউদ্দিন বলেন, “যারা ইতিহাস বিকৃতি করছে, বিএনপি ও অন্যান্য দলের নেতাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে, তারাই ফ্যাসিবাদকে স্বাগত জানাচ্ছে।”
তিনি বলেন, “জুলাই আন্দোলন ছিল ১৭ বছরের আন্দোলনের ধারাবাহিকতা। ৩৬ দিনের বিক্ষোভেই ফ্যাসিস্ট সরকার পতন সম্ভব ছিল না, তার পেছনে ছিল দীর্ঘ লড়াইয়ের ইতিহাস।”
ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব অভিযোগ করেন, “মিটফোর্ড ঘটনার পর থেকে একটি গোপন সংগঠন রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়াতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বুয়েট ও চুয়েটে আমাদের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে অশ্লীল স্লোগান দেওয়া হয়েছে।”
তিনি দাবি করেন, তারেক রহমানবিরোধী প্রচারণা চালানো হচ্ছে জামায়াতের এক নায়েবে আমিরের ভায়রা ভাইয়ের নেতৃত্বে।
রাকিব বলেন, “আমরা সমালোচনা গ্রহণ করি, তবে আমাদের সহ্যের সীমাও আছে। আমরা ‘৭১ ও ‘২৪-এর পরাজিত শক্তি ছাড়া সবাইকে সঙ্গে নিয়ে একত্র হতে চাই।”
সোশালিস্ট স্টুডেন্টস ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, “গণহত্যার বিচার নিয়ে শহিদ পরিবারের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। অথচ ন্যায়বিচার নিশ্চিত না করে রাজনৈতিক বিভাজন সৃষ্টি করা হচ্ছে।”
সংগঠনের নেত্রী মুক্তা বড়ই বলেন, “আজ রাজাকারদের পুনর্বাসন ও স্বাভাবিকীকরণ শুরু হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দিয়ে দেশে গুন্ডাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে।”
বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্ট কাউন্সিলের আহ্বায়ক আবু বকর মজুমদার বলেন, “ছাত্রদলের ভাইয়েরা শুরু থেকেই আন্দোলনে ছিল। ১৫ জুলাই একাত্তর হলের প্রথম হামলায়ও তারা আহত হয়েছে। এখানে কোনো একক সংগঠনই কৃতিত্ব দাবি করতে পারে না।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহি বলেন, “এই আন্দোলনের কৃতিত্ব শহিদদের, কোনো রাজনৈতিক দলের নয়। আমাদের গণতান্ত্রিক সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।”