Friday, August 8, 2025
Homeঅর্থ-বাণিজ্যচট্টগ্রাম থেকে মাছ রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি, তবে পিছিয়ে খাতুনগঞ্জ

চট্টগ্রাম থেকে মাছ রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি, তবে পিছিয়ে খাতুনগঞ্জ

কাঁচামালের সংকট, অবকাঠামো দুর্বলতা ও উচ্চ খরচে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে চট্টগ্রাম

২০২৪-২৫ অর্থবছরে (এফওয়াই২৫) চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে মাছ ও মাছজাত পণ্য রপ্তানি ৭.২১ শতাংশ বেড়েছে। আগের অর্থবছরের (এফওয়াই২৪) তুলনায় রপ্তানি পরিমাণ ও আয় উভয়ই বেড়েছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রামের ফিশ ইনস্পেকশন অ্যান্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল (এফআইকিউসি) অফিস।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এফওয়াই২৫-এ চট্টগ্রাম থেকে ২৩ হাজার ৭৯৭ দশমিক ৮১ টন মাছ ও মাছজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছর ছিল ২২ হাজার ১৯৬ দশমিক ৯৯ টন। এতে আয় হয়েছে ১০০ দশমিক ১২ মিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের ৯৮ দশমিক ৪৩ মিলিয়নের চেয়ে বেশি। দেশের মোট মাছ রপ্তানি আয়ের ২২ দশমিক ৬৭ শতাংশ এসেছে এই অঞ্চল থেকে।

জাতীয় পর্যায়ে এ সময়কালে মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৪৪১ দশমিক ৫৮ মিলিয়ন ডলারে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৭ দশমিক ২৩ শতাংশ বেশি।

তবে প্রবৃদ্ধির পরও চট্টগ্রাম পিছিয়ে রয়েছে খুলনার তুলনায়। কাঁচামালের সহজপ্রাপ্যতা, উঁচু প্রক্রিয়াজাতকরণ খরচ এবং দুর্বল লজিস্টিকস ও অবকাঠামোকে এর প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা চট্টগ্রামের রপ্তানি প্রতিযোগিতা বৃদ্ধিতে আর্থিক ও নীতিগত সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন।

এফওয়াই২৫-এ চট্টগ্রাম থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে রপ্তানি হয়েছে ৩,৯৮১.৭৯ টন (৩২.৩৮ মিলিয়ন ডলার), যুক্তরাষ্ট্রে ৬৩৪.৭০ টন (৬.৯৪ মিলিয়ন ডলার), জাপানে ৯৮৯.১৯ টন (৮.৩২ মিলিয়ন ডলার) এবং অন্যান্য দেশে ১৮,১৯২.১৩ টন (৫২.৪৮ মিলিয়ন ডলার)।

তুলনামূলকভাবে, এফওয়াই২৪-এ এই পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৩,৯৮০.৩৩ টন (৩৩.২৪ মিলিয়ন), ৮৩৪.৬৯ টন (৯.১৭ মিলিয়ন), ৭১৬.২৩ টন (১ মিলিয়ন) ও ১৬,৬৬৫.৭৪ টন (৪৯.০১ মিলিয়ন)। আর এফওয়াই২৩-এ আয় ছিল ১১৬.২৩ মিলিয়ন ডলার।

চিংড়ি মাছ এখনো দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য, যা মোট মাছ রপ্তানির ৭৭ শতাংশ। তবে বাংলাদেশ এখনো বৈশ্বিক চাহিদার মাত্র ৪ শতাংশ পূরণ করতে পারে।

র‍্যানকন সি-ফিশিং ডিভিশনের সিইও তানভীর শাহরিয়ার রিমন বলেন, “চট্টগ্রামে প্রক্রিয়াজাতকরণ অবকাঠামোর ঘাটতি রয়েছে। গভীর সমুদ্রের চিংড়ি সংগ্রহ ব্যয়বহুল। খুলনা, বাগেরহাট বা সাতক্ষীরার মতো হ্যাচারিও এখানে নেই।”

তিনি জানান, কাঁচামালের অভাবে অনেক প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। তাঁর মতে, বন্দরসংলগ্ন একটি রপ্তানিমুখী ক্লাস্টার এবং মূল্য সংযোজনমূলক কারখানা প্রতিষ্ঠা করলে পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব।

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) সহসভাপতি দোদুল কুমার দত্ত বলেন, “দেশে ১১০টি প্রক্রিয়াজাতকরণ প্ল্যান্ট থাকলেও মাত্র ৫০-৬০টি চালু রয়েছে, যার মধ্যে চট্টগ্রামে রয়েছে ৮-১০টি।”

তিনি জানান, চিংড়ি ছাড়াও কোই, পাবদা, শিং, পুঁটি, কাচকি ইত্যাদি মিঠা পানির মাছ ইউরোপ, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য এবং মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি হয় মূলত প্রবাসী বাংলাদেশিদের কারণে।

তবে চট্টগ্রাম খুলনার উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তাদের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যায় বলে দত্ত মনে করেন। তিনি আরও জানান, ভ্যানামি চিংড়ি উৎপাদনে বাংলাদেশের দেরি এবং যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধিও ভবিষ্যতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ্র বলেন, “এ অঞ্চলের ৩০ শতাংশ প্রক্রিয়াজাতকরণ সক্ষমতা অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে কাঁচামালের অভাবে। খুলনা থেকে মাছ সংগ্রহ করতে হয়, ফলে খরচ বেড়ে যায়।”

তবে তিনি জানান, কক্সবাজারের চকরিয়ায় ৭ হাজার একর এলাকায় একটি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে, যা নভেম্বরে শেষ হলে পরিস্থিতির উন্নয়ন হবে এবং রপ্তানি বাড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে।

RELATED NEWS

Latest News