হিমাচল প্রদেশে দিন দিন বাড়তে থাকা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা, বিশেষ করে মেঘফাটা, হঠাৎ বন্যা ও ভূমিধসের মতো ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে কেন্দ্র সরকার। এসব সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নির্দেশে একটি বহু-ক্ষেত্রভিত্তিক কেন্দ্রীয় দল গঠন করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের (এমএইচএ) বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই টিমে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এনডিএমএ), রুরকির সেন্ট্রাল বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিবিআরআই), পুনের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল মেটিওরোলজি (আইআইটিএম), আইআইটি ইন্দোর ও ভূতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় টিম (আইএমসিটি) ১৮ থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শন করছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্র সরকার দুর্যোগকালীন সময়ে রাজ্যগুলোর পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। ইতোমধ্যে ২০২৩ সালের বন্যা, ভূমিধস ও মেঘফাটনের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় হিমাচলকে ₹২,০০৬.৪০ কোটি বরাদ্দ দিয়েছে কেন্দ্র, যার প্রথম কিস্তি ₹৪৫১.৪৪ কোটি ৭ জুলাই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ১৮ জুন রাজ্যের স্টেট ডিজাস্টার রেসপন্স ফান্ড (এসডিআরএফ) থেকে ₹১৯৮.৮০ কোটি ছাড় দেওয়া হয়।
বর্তমানে রাজ্যে জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর (এনডিআরএফ) ১৩টি দল উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে নিযুক্ত রয়েছে।
২০ জুলাই হিন্দুস্তান টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুক্কু জানান, সাম্প্রতিক দুর্যোগে রাজ্যের প্রাথমিক ক্ষতি প্রায় ₹১,১০০ কোটি। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনকে এই দুর্যোগ বৃদ্ধির জন্য দায়ী করেন।
তার ভাষায়, “জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মেঘফাটার সংখ্যা বেড়েছে, যা হঠাৎ করে প্রবল বন্যা ও বড় ধরনের ভূমিধস ডেকে আনছে। হিমাচলে এর আগে কখনও এত ব্যাপক মেঘফাটার ঘটনা ঘটেনি। আমরা কেন্দ্রকে বলেছি এই সমস্যার ওপর একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালাতে।”
এখন পর্যন্ত বর্ষাকালে রাজ্যে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ৮৫ জন এবং ৩৪ জন এখনো নিখোঁজ। মণ্ডি ও কুল্লু এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে একাই ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ₹১০০ কোটি।
বর্ষা এখনও সক্রিয় থাকায় পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা পূর্বানুমান করা যাচ্ছে না।
আইআইএসসি-র ডাইভেচা সেন্টারের জলবায়ু পরিবর্তন গবেষক অনিল কুলকার্নি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বেড়েছে, ফলে বৃষ্টিপাত ও মেঘফাটা বেড়েছে। পর্বত অঞ্চলগুলোতে আর্দ্রতা বেশি থাকায় এগুলোর ঝুঁকি বাড়ে। তাছাড়া ভূমির ব্যবহারেও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে, রাস্তা প্রশস্ত করার ফলে স্লোপ স্থিতিশীল হয়নি, নির্মাণবর্জ্য নদীতে পড়ছে।”
তার মতে, “যদি আমাদের উন্নয়ন মডেলে বড় ধরনের পরিবর্তন না আসে, তাহলে এ ধরনের দুর্যোগ বাড়তেই থাকবে।”
এই পরিস্থিতিতে গবেষণা, সমন্বিত পরিকল্পনা এবং জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।