Saturday, July 26, 2025
Homeঅর্থ-বাণিজ্যআর্থিক খাতে পুনরুদ্ধারে বিচারব্যবস্থা বাধা, 'ঋণ আদালত আইন' সংশোধনের ইঙ্গিত গভর্নরের

আর্থিক খাতে পুনরুদ্ধারে বিচারব্যবস্থা বাধা, ‘ঋণ আদালত আইন’ সংশোধনের ইঙ্গিত গভর্নরের

বিচারব্যবস্থার বর্তমান অবস্থান থাকলে আর্থিক খাত কখনোই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না, বললেন গভর্নর আহসান এইচ. মানসুর

আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারে বিচারব্যবস্থা অন্যতম প্রধান বাধা হিসেবে কাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মানসুর। সম্প্রতি একটি স্থানীয় গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘যদি বিচারব্যবস্থা এভাবে চলতে থাকে, তাহলে দেশের আর্থিক খাত কখনোই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।’

তিনি জানান, বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় ‘আর্থ ঋণ আদালত আইন’ শিগগিরই সংশোধনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গভর্নরের মতে, আন্তর্জাতিক মান অর্জনে সরকারের তিনটি প্রধান স্তম্ভ—বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকার ও বিচার বিভাগ—কে সমন্বয়ে কাজ করতে হবে।

বহুল আলোচিত খেলাপি ঋণের প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, ‘ডিফল্টার মানে ডিফল্টার। কোনো ব্যক্তি উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ পেলেও ব্যাংকের দৃষ্টিতে তিনি খেলাপি হিসেবেই বিবেচিত হবেন।’

সম্প্রতি অগ্রণী ব্যাংকের একটি ঘটনাও তুলে ধরেন তিনি, যেখানে একজন ঋণগ্রহীতা স্থগিতাদেশ থাকা সত্ত্বেও খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হন এবং তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। গভর্নরের মতে, এটি নীতিগতভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত।

গত এক বছরে ব্যাংক খাতের সংস্কার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর জানান, ‘এই সংকট একদিনে তৈরি হয়নি। গত আট-নয় বছর ধরে পরিকল্পিতভাবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দখল করা হয়েছে এবং সেখান থেকে অর্থ পাচার করা হয়েছে।’

তিনি একে ‘মধুভাণ্ডারের’ সাথে তুলনা করে বলেন, ‘মানুষ যেমন মধু নিয়ে যায়, তেমনি তারা এই খাত থেকে অর্থ নিয়ে গেছে। কেউ জনগণের আমানতের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবেনি।’

তিনি আরও দাবি করেন, সরকারের চোখের সামনেই এই ‘লুটপাট’ হয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সরাসরি এসব গোষ্ঠীকে সহযোগিতা করেছে।

গভর্নর মনে করিয়ে দেন, সে সময়ে নাগরিক সমাজ ও তিনি নিজেও সরাসরি সাবেক এক গভর্নরকে সতর্ক করেছিলেন। ‘আমি তাকে বলেছিলাম, সাবধান থাকুন অমুক ব্যক্তির ব্যাপারে। কারণ সে যদি ব্যাংক দখল করে ফেলে, তাহলে পুরো খাত ধসে পড়বে।’

সাক্ষাৎকারের শেষে গভর্নর বলেন, ‘তখন আমি বলেছিলাম, যদি একাধিক ব্যাংক একসাথে পড়ে যায়, তাহলে আমাদের অ্যাম্বুলেন্স লাগবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটাই হয়েছে। পুরো ব্যাংকিং খাত একটি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, যারা এটিকে লুটের খাত বানিয়ে ফেলেছে।’

বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক খাতের নীতি ও আইন সংস্কারে গুরুত্ব দিচ্ছে। ঋণ আদালত আইন সংশোধনের মাধ্যমে খেলাপি নিয়ন্ত্রণ ও দায়িত্বশীল ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন গভর্নর।

RELATED NEWS

Latest News