সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা শিশুদের প্রতি সহিংসতা ও শোষণ বন্ধে সমন্বিত সামাজিক উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেন, বিশেষ করে গার্মেন্টস শ্রমিকদের শিশুদের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে কমিউনিটি ভিত্তিক, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সুরক্ষা কাঠামো গড়ে তোলা জরুরি।
সোমবার ঢাকায় আয়োজিত জাতীয় সেমিনার “Community-Based Child Protection Mechanism for the Children of Garment Workers in Bangladesh” এ এসব মতামত উঠে আসে। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে Terre des Hommes Netherlands (TdH NL), ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স (BTS) এবং ভিলেজ এডুকেশন রিসোর্স সেন্টার (VERC)।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন TdH NL বাংলাদেশ কান্ট্রি ম্যানেজার নাজরুল ইসলাম এবং পরিচালনা করেন BTS পরিচালক মো. জাহিদুল ইসলাম।
প্রোগ্রামে TdH NL এর প্রোগ্রাম সমন্বয়ক নুরুল কাবির বলেন, বাংলাদেশে লাখো শিশু এখনো পরিচয়ের অধিকার থেকে বঞ্চিত।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান খান বলেন, “শিশুরা নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ইন্টারনেটেও অদৃশ্য ফাঁদে পড়ছে। সুস্থ বিকাশের জন্য এসব বন্ধ করতে হবে। কমিউনিটির অংশগ্রহণ ছাড়া নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।”
সভাপতির বক্তব্যে নাজরুল ইসলাম বলেন, অনেক পরিবার গ্রাম থেকে শহরে এসে কাজের খোঁজে বসতি গড়ে তোলে। এতে তারা গ্রামের সামাজিক সহায়তা হারায় এবং তাদের সন্তানরা অনিশ্চয়তায় বেড়ে ওঠে। এই বাস্তবতা মোকাবিলায় TdH বর্তমানে মিরপুর ও গাজীপুরে গার্মেন্টস শ্রমিকদের শিশু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ১৬টি প্রাথমিক উন্নয়ন কেন্দ্র পরিচালনা করছে। তিনি কারখানা মালিকদেরও শিশু সহায়তায় উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।
সেমিনারে কয়েকটি সুপারিশ গৃহীত হয়। এর মধ্যে ছিল গার্মেন্টস শ্রমিকদের শিশুদের জন্য শিশু-বান্ধব সুরক্ষা কাঠামো তৈরি, সংশ্লিষ্ট এলাকায় কমিউনিটি ভিত্তিক সুরক্ষা ব্যবস্থা চালু, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে বিশেষায়িত শিশু সুরক্ষা ইউনিট গঠন, নারী অধিদপ্তরের মতো শিশু-বান্ধব একটি বিশেষ অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা, সহিংসতা ও শোষণ প্রতিরোধে জাতীয় সমন্বিত ব্যবস্থা গড়ে তোলা, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মান অনুযায়ী আইন সংস্কার এবং শিশু-বান্ধব বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন নারী অধিদপ্তরের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) নাইমা হোসেন, বিএমজিইএ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান জাভেদ হোসেন ভূঁইয়া, সহকারী কমিশনার ফারিয়া তাসনিম, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা রাশেদা বেগম, TdH ইতালির কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ রাজীব দেবনাথ, কাউন্সিলর মেহেরুন নেসা ও পারভীন আখতার, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের উপদেষ্টা মাবরুক মোহাম্মদ এবং ইনসিডিন প্রকল্পের অ্যাডভোকেট মো. রফিকুল আলম প্রমুখ।
