দেশজুড়ে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছিল বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। তবে অভিযানের প্রথম দিনের তুলনায় পরবর্তী সময়ে গাড়ি জব্দের হার কমে গেছে। এই অবস্থায় পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছে।
সরকার সম্প্রতি একটি গেজেট প্রকাশ করে বাস ও মিনিবাসের আর্থিক আয়ুষ্কাল ২০ বছর এবং ট্রাক ও অন্যান্য পণ্যবাহী যানবাহনের আয়ুষ্কাল ২৫ বছর নির্ধারণ করেছে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে ২০ জুলাই থেকে দেশব্যাপী অভিযান শুরু করে বিআরটিএ।
প্রথম দিনেই ৪৯৫টি মামলা, ২০টি গাড়ি জব্দ এবং ১১ লাখ ৬৪ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। কিন্তু ২১ থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত ১ হাজার ৫৩৫টি মামলা হলেও মাত্র ৮টি গাড়ি জব্দ হয়েছে। জরিমানার পরিমাণ ৩৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকা হলেও গাড়ি জব্দের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।
বিআরটিএর এনফোর্সমেন্ট পরিচালক মো. হেমায়েত উদ্দিন বলেন, “গাড়ি রাখার জন্য নির্ধারিত জায়গা নেই। বর্তমানে খোলা জায়গায় বা থানা ও বিআরটিএ অফিসের সামনে গাড়ি রাখা হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “ধর্মঘটের হুমকিতে আমরা দমে যাওয়ার মতো নয়। আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তবে আমাদের অভিযান চলবে যতক্ষণ না অন্য নির্দেশ আসে।”
বিআরটিএ সূত্র জানায়, প্রতিদিন ১৫টি মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে। অথচ দেশের সড়কে ৮০ হাজারের বেশি মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি চলাচল করছে।
এদিকে, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের একটি যৌথ প্ল্যাটফর্ম ২৭ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে ১১ আগস্টের মধ্যে দাবি না মানলে ১২ আগস্ট সকাল ৬টা থেকে ১৫ আগস্ট সকাল ৬টা পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছে। তাদের আট দফা দাবির মধ্যে রয়েছে:
বাণিজ্যিক গাড়ির আয়ুষ্কাল ৩০ বছর করা
রিকন্ডিশনড গাড়ি আমদানির বয়সসীমা ১২ বছর নির্ধারণ
অগ্রিম আয়কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল
দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মালিককে ফেরত দেওয়া
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব সাইফুল আলম বলেন, “দাবি না মানলে বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও প্রাইম মুভারসহ সব ধরনের গাড়ি বন্ধ থাকবে।”
এর আগেও ২০ জুলাই পরিবহন নেতারা একই ধরনের হুমকি দিয়েছিলেন।
এদিকে, বিআরটিএর সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. শামসুল হক। তিনি বলেন, “কোনো দেশ গাড়ির আয়ুষ্কাল বছর দিয়ে নির্ধারণ করে না। রক্ষণাবেক্ষণ খারাপ হলে ২০ বছরের আগেই গাড়ি অচল হতে পারে, আবার ভালো রক্ষণাবেক্ষণে ৩০ বছরও চলতে পারে।”
তিনি মনে করেন, “এ ধরনের অনৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত না নিয়ে বিআরটিএর উচিত ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক গণপরিবহন চালু করে শৃঙ্খলা আনা।”
গাড়ি অপসারণে বিআরটিএর উদ্যোগ যেমন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে, তেমনি ধর্মঘটের হুমকিতে যাত্রী সাধারণের দুর্ভোগের আশঙ্কা বাড়ছে। সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়নের এই ব্যবধান সমাধানে কার্যকর ও যৌক্তিক পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।