ভারতের জাতীয় রাজধানী দিল্লির অন্তত ২০টিরও বেশি স্কুল শুক্রবার সকালে বোমা হামলার হুমকি সংবলিত ইমেইল পেয়েছে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষক সমাজে। দিল্লি পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত করে তদন্ত শুরু করেছে।
পশ্চিম বিহারের রিচমন্ড গ্লোবাল স্কুল এবং রোহিনী সেক্টর ৩-এ অবস্থিত অভিনব পাবলিক স্কুলসহ আরও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই হুমকি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে দিল্লি ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ।
দিল্লি ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, তারা খবর পাওয়ার পরপরই পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে জরুরি সেবা ও তল্লাশি দল পাঠিয়েছে। বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল, ফায়ার টেন্ডার, ডগ স্কোয়াডসহ বিশেষ পুলিশ ইউনিট কাজ করছে ঘটনাস্থলে। এখন পর্যন্ত কোনো সন্দেহজনক বস্তু পাওয়া যায়নি।
এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও আপ নেত্রী আতিশি বলেছেন, “২০টির বেশি স্কুলে বোমার হুমকি এসেছে! শিশু, অভিভাবক ও শিক্ষকদের মানসিক অবস্থার কথা চিন্তা করুন। বিজেপি দিল্লির চার স্তরের প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করেও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না। এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।”
এনআইএ-র বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, হুমকির ইমেইলে লেখা ছিল, “স্কুলের ক্লাসরুমে একাধিক বিস্ফোরক (ট্রাইনাইট্রোটলুইন) স্থাপন করেছি। এগুলো কালো প্লাস্টিক ব্যাগে সKillfully লুকানো। আমি সবাইকে শেষ করে দেব। কোনো প্রাণী বেঁচে থাকবে না। আমি হেসে হেসে নিউজ দেখব, যেখানে বাবা-মা এসে তাদের সন্তানের ছিন্নভিন্ন দেহ দেখবে।”
আরও লেখা ছিল, “তোমরা কষ্ট পাওয়ারই যোগ্য। আমি আমার জীবনকে ঘৃণা করি, নিউজ দেখার পর আত্মহত্যা করব। আমি কখনোই সত্যিকারের সহায়তা পাইনি, কাউন্সেলররা কখনোই পরোয়া করেনি। তোমরা শুধু ওষুধ দিয়ে নিরীহ মানুষদের দমন করো। এই কষ্টের জন্য তোমরাই দায়ী।”
এর আগেও দিল্লির বেশ কয়েকটি স্কুল ও কলেজ একই ধরনের হুমকির ইমেইল পেয়েছে। গত বুধবার সর্দার প্যাটেল বিদ্যালয় একটি বোমা হুমকির কারণে সতর্কতামূলকভাবে স্কুল বন্ধ রাখে।
তালিকাভুক্ত অন্যান্য স্কুলের মধ্যে রয়েছে ডোয়ারকার সেন্ট থমাস স্কুল, বসন্ত কুঞ্জের বসন্ত ভ্যালি স্কুল, হাউজ খাসের দ্য মাদারস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এবং লোধি এস্টেটের সর্দার প্যাটেল বিদ্যালয়।
সেন্ট স্টিফেনস কলেজও সম্প্রতি একটি হুমকির ইমেইল পেয়েছিল, যেখানে তাদের লাইব্রেরিতে বিস্ফোরক রাখা হয়েছে বলে দাবি করা হয়। পরে তল্লাশিতে কিছুই পাওয়া যায়নি।
দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইমেইলগুলোর উৎস ও বিশ্বাসযোগ্যতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, পরপর এই ধরনের হুমকি রাজধানীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এদিকে অভিভাবকদের অনেকেই শিশুদের স্কুলে পাঠানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সাইবার নিরাপত্তা ইউনিট এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় সংস্থাও এখন এই তদন্তে যুক্ত হয়েছে। সন্দেহ করা হচ্ছে, এটি কোনো বৃহৎ ষড়যন্ত্র বা মনোবিকৃত সাইবার হামলার অংশ হতে পারে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসন ইতোমধ্যেই কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে এবং স্কুল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে ভবিষ্যতে এ ধরনের ইমেইল পেলে দ্রুত পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে।