জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অভিযোগ করেছে যে, মৌলিক সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের আলোচনায় বিএনপি ও কয়েকটি রাজনৈতিক দল প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন এই অভিযোগ তোলেন। এটি ছিল দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার ১৪তম দিন।
আখতার হোসেন বলেন, “যখনই সংস্কার সংক্রান্ত বড় কোনো ইস্যু তোলা হয়, তখনই বিএনপি ও কয়েকটি দল আপত্তি তোলে এবং আলোচনার গতি ব্যাহত করে। তারা এমন পরিবেশ তৈরি করছে, যাতে এই সংস্কার এজেন্ডাগুলো আলোচনার বাইরে চলে যায়।”
তিনি আরও বলেন, “যখন উচ্চকক্ষে প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (PR) পদ্ধতি চালুর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপন করা হয়, তখন বিএনপিসহ কয়েকটি দল সরাসরি আপত্তি জানায়। তারা চায় না এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হোক।”
এনসিপির সংস্কার প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে ক্ষমতার ভারসাম্য, জবাবদিহিতা ও বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করা, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমা নির্ধারণ, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনী পদ্ধতি সংস্কার, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ পদ্ধতি নির্ধারণ, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের কার্যকর রূপ দেওয়া এবং সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানসমূহে নিরপেক্ষ নিয়োগ ব্যবস্থা চালু করা।
আখতার বলেন, “প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষ ব্যবস্থায় যেসব দল অন্তত ১ শতাংশ ভোট পাবে, তারা সংসদে প্রতিনিধিত্ব পাবে। এতে অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র এবং ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ তৈরি হবে।”
তিনি সংবিধানের ৪৮, ৫৬, ১৪২ ও ৫৮(ক) অনুচ্ছেদের দিকেও ইঙ্গিত করেন এবং বলেন, এসব অনুচ্ছেদ রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামো নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোর সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের ব্যবস্থা রাখা উচিত।
আলোচনায় অংশ নেওয়া কয়েকটি দল সংস্কার প্রস্তাবগুলোকে সংখ্যা ও অনুপাতে সীমিত করে ফেলছে বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন আখতার। তিনি বলেন, “সবাই যখন তুচ্ছ বিষয়ে একমত হয়, তখন সমস্যা হয় না। কিন্তু ক্ষমতার ভারসাম্য, জবাবদিহিতা এবং উচ্চকক্ষের কার্যকারিতা নিয়ে কথা উঠলেই বিএনপি পিছু হটে।”
এক প্রশ্নের উত্তরে এনসিপির এই নেতা বলেন, “আমরা যখন সংস্কার বলি, তখন তার মানে শুধুমাত্র নমনীয় বিষয়ে সমঝোতা নয়, বরং রাষ্ট্র কাঠামোর মৌলিক রূপান্তর—যেখানে থাকবে দুই কক্ষের সংসদে অংশগ্রহণ, ন্যায্য নিয়োগ এবং জনগণের প্রত্যক্ষ মতামতের প্রতিফলন।”
এই দিনটির আলোচনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণসংহতি আন্দোলনসহ আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়।