Thursday, July 10, 2025
Homeজাতীয়বাংলাদেশে করোনা ও ডেঙ্গুতে ঊর্ধ্বগতি, সতর্কবার্তা বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের

বাংলাদেশে করোনা ও ডেঙ্গুতে ঊর্ধ্বগতি, সতর্কবার্তা বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের

BMU উপ-উপাচার্য বলেছেন, ‘প্রমাণভিত্তিক ব্যবস্থা না নিলে চাপ সামলানো অসম্ভব হয়ে পড়বে’

বাংলাদেশে আবারও একযোগে বাড়ছে করোনা, ডেঙ্গু ও ভাইরাসজনিত জ্বরের প্রকোপ। এ অবস্থায় স্বাস্থ্য খাতে চাপ বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (BMU) উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ।

মঙ্গলবার এক সেমিনারে তিনি বলেন, “আমরা এক সংকটময় সময়ের দিকে এগোচ্ছি। এখনই পদক্ষেপ না নিলে হাসপাতালগুলো চাপে ভেঙে পড়তে পারে।”

BMU আয়োজিত ‘বাংলাদেশে চলমান জ্বর পরিস্থিতির পর্যালোচনা’ শীর্ষক এই সেমিনারে দেশের শীর্ষ চিকিৎসক ও গবেষকরা অংশ নেন।

অধ্যাপক আজাদ বলেন, “সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়াতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মানা জরুরি। মাস্ক পরা, পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ও অপ্রয়োজনীয় ভিড় এড়ানো এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন BMU-এর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। তিনি আতঙ্ক নয়, বরং সচেতনতার ওপর গুরুত্ব দেন এবং ডেঙ্গু চিকিৎসায় গাইডলাইন মেনে চলার পরামর্শ দেন।

অ্যাসোসিয়েট অধ্যাপক ডা. ফজলে রাব্বি চৌধুরী জানান, দেশে ওমিক্রনের নতুন উপ-ভ্যারিয়েন্ট XFG ও XFC এর মাধ্যমে সংক্রমণ বাড়ছে। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এগুলোকে এখনো ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ ঘোষণা করেনি, তবে এর গতি উদ্বেগজনক।

তিনি বলেন, “ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, ক্যান্সার বা ডায়ালাইসিসে থাকা রোগীদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। ফ্লুরোনা নামেও পরিচিত কো-ইনফেকশনগুলো রোগীদের জটিলতায় ফেলছে।”

এমন রোগীদের বাইরে না বেরোনো, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া ও পানি খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

ডেঙ্গু বিষয়ে অ্যাসোসিয়েট অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল হাসান বলেন, ভাইরাসজনিত রোগে অ্যান্টিবায়োটিক ও স্টেরয়েড বিপজ্জনক। “প্যারাসিটামল, বিশ্রাম ও পর্যাপ্ত তরল গ্রহণই সবচেয়ে কার্যকর চিকিৎসা,” বলেন তিনি।

তিনি আরও জানান, পাপইয়া পাতার রসের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই বরং এটি লিভারে ক্ষতি করতে পারে। প্লেটলেট ট্রান্সফিউশন শুধু ক্লিনিক্যালি প্রয়োজন হলে ব্যবহার করা উচিত।

তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে অন্তত ১ হাজার ৮০০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং ঢাকাসহ বরিশাল অঞ্চলে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

অভ্যন্তরীণ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আবেদ হোসেন খান জানান, চিকুনগুনিয়াও ফিরতে শুরু করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ১৬১টি নিশ্চিত রোগী শনাক্ত হয়েছে যাদের অনেকেই দীর্ঘমেয়াদি লক্ষণে ভুগছেন।

অধ্যাপক আজাদ সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে জ্বর ক্লিনিক চালু করা, পর্যাপ্ত স্যালাইন ও জরুরি সেবা নিশ্চিত করা এবং চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের নির্দেশ দেন।

তিনি বলেন, “ভয় নয়, বিজ্ঞানভিত্তিক সমন্বিত উদ্যোগই আমাদের শক্তি।”

সেমিনারটি আয়োজন করেন BMU-এর অভ্যন্তরীণ মেডিসিন বিভাগ এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সহকারী অধ্যাপক ডা. খালেদ মাহবুব মোর্শেদ মামুন।

উপস্থিত ছিলেন গবেষণা ও উন্নয়ন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান ও জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকরা।

RELATED NEWS

Latest News