Monday, October 27, 2025
Homeঅর্থ-বাণিজ্যবেনাপোলে সন্ধ্যার পর আমদানি-রপ্তানি বন্ধে বাণিজ্যে স্থবিরতা

বেনাপোলে সন্ধ্যার পর আমদানি-রপ্তানি বন্ধে বাণিজ্যে স্থবিরতা

পূর্বঘোষণা ছাড়াই সিদ্ধান্তে সীমান্তে আটকে আছে দেড় হাজার ট্রাক, ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ

বেনাপোল স্থলবন্দরে সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে সব ধরনের আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তে অচল হয়ে পড়েছে বাণিজ্য। কোনো পূর্বঘোষণা বা বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়াই এই নীতিগত পরিবর্তন কার্যকর করায় বিপর্যস্ত হয়েছে সীমান্ত বাণিজ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা।

কর্তৃপক্ষ বলছে, অবৈধ পণ্য ও চোরাচালান রোধে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলছেন, এমন আকস্মিক সিদ্ধান্তে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।

সিদ্ধান্তের পর থেকেই বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে শত শত ট্রাকের সারি জমেছে। প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার ট্রাক দুই পাশেই আটকে থাকছে। ফলে পচনশীল পণ্য যেমন ফল, শাকসবজি, মাছ, কসমেটিকস ও রাসায়নিক কাঁচামাল নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। আগে যেখানে প্রতিদিন ৪০০–৪৫০টি ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করত, এখন তা নেমে এসেছে ১৮০–২০০-তে।

চট্টগ্রাম চেম্বার সূত্রে জানা যায়, এই সীমাবদ্ধতার কারণে প্রতিদিন ১০০–১৫০ কোটি টাকার পণ্য আটকে থাকছে, এবং সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে কয়েক কোটি টাকা।

বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু অ্যাসোসিয়েশন দাবি করেছে, আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।

ভারতের আমদানিকারক এক সূত্র জানায়, একতরফা এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ-ভারতের বাণিজ্যনীতির পরিপন্থী।

২০১৭ সালের ১ আগস্ট দুই দেশ বেনাপোল-পেট্রাপোল ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্ট (আইসিপি) চালুর ঘোষণা দিয়েছিল। ২০২৪ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সব কাস্টমস হাউসকে ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার নির্দেশ দেয়। কিন্তু বেনাপোলে তা এখনো কার্যকর হয়নি, যা আঞ্চলিক বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অবস্থান দুর্বল করছে।

জশোর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, “এ ধরনের সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া উচিত। একতরফাভাবে সেবা সময় কমানো বাণিজ্যবান্ধব নয় এবং জাতীয় অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর।”

সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী আনরুল ইসলাম বলেন, “পূর্বঘোষণা ছাড়া সন্ধ্যার পর বন্দর বন্ধ করা গ্রহণযোগ্য নয়। শত শত ট্রাক সীমান্তে আটকে আছে, ব্যবসায়ীরা বিপুল ক্ষতির মুখে।” তিনি সতর্ক করে বলেন, “এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসায়ীরা ভোমরা, হিলি বা সোনামসজিদ বন্দরের দিকে ঝুঁকবে, ফলে সরকারের রাজস্ব আয় কমে যাবে।”

এদিকে, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এই আকস্মিক সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, চোরাচালান ঠেকাতে কার্যকর সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন, তবে দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বন্ধ করে দেওয়া গ্রহণযোগ্য নয়।

২০২৪–২৫ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশের আমদানি হয়েছে ২০ লাখ ১১ হাজার ২৬৮ টন এবং রপ্তানি হয়েছে ৪ লাখ ২১ হাজার ৭১৩ টন। ডিসিসিআই বলছে, বর্তমান সিদ্ধান্তে শুধু ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতিই নয়, সরকারের রাজস্বও কমে যাবে।

সংস্থাটি দ্রুত এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে বেনাপোল স্থলবন্দরে নির্বিঘ্ন বাণিজ্য নিশ্চিতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

RELATED NEWS

Latest News