Friday, August 1, 2025
Homeজাতীয়বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি নিয়মিত পর্যালোচনার দাবি

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি নিয়মিত পর্যালোচনার দাবি

বিদেশি নীতিতে সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে আলোচনা

বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সভাপতি ও প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেছেন, বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিশ্ববাসীর সঙ্গে কার্যকরভাবে যুক্ত হতে হলে পররাষ্ট্রনীতি নিয়মিত পর্যালোচনা ও সংস্কারের প্রয়োজন।

তিনি বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিআইআরড্যাপ অডিটোরিয়ামে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ আয়োজিত ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি’ শীর্ষক আলোচনায় বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে মাত্র দু’বারই বড় কোনো পরিবর্তন হয়েছে আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে। এর সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রতি চার বছরে তাদের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা নীতি পর্যালোচনা করে থাকে।

হুমায়ুন কবির বলেন, “আমরা একপায়ের খাড়ায় দাঁড়িয়ে আছি। রপ্তানির ওপর নির্ভরতা খুব বেশি। আমরা গত ৪০ বছরে জ্বালানি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনতে ব্যর্থ হয়েছি।”

তিনি দেশের কূটনীতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে ঢাকায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের জটিলতাকে উল্লেখ করেন। বলেন, “বিদেশে কূটনীতি চালানো সম্ভব হলেও ঢাকায় ফিরে চুক্তি চূড়ান্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে।”

বাংলাদেশি রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে পররাষ্ট্রনীতির দুর্বলতার প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক সময় রাজনৈতিক দলেরা বাইরের শক্তি ব্যবহার করে নিজেদের প্রতিপক্ষকে দুর্বল করতে চায়।

আলোচনায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) আনএম মুনিরুজ্জামান বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংস্কারের প্রয়োজন। বেসরকারি খাতকেও পররাষ্ট্রনীতির অংশ করতে হবে এবং জলবায়ু কূটনীতির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

তিনি বলেন, দূতাবাসগুলোকে প্রবাসীদের স্বার্থ রক্ষায় শক্তিশালী করতে হবে, সার্ক অঞ্চল পুনর্জীবিত করতে হবে, মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। সামুদ্রিক নীতি নতুনভাবে নির্ধারণ ও বিশ্বে পরিচিত করতে হবে।

সাইবার সুরক্ষা ও প্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জন প্রয়োজন বলে মুনিরুজ্জামান বলেন, “বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।”

সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের সভাপতি জিল্লুর রহমান বলেন, “বিদেশি সম্পর্কের ক্ষেত্রে এখন ‘সংস্কার’ শব্দটি বিতর্কিত। সাম্প্রতিক ১৫ বছরে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো হয়নি, ভারতের সঙ্গে তুলনায় ভাল। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক এখনো ঝুঁকিপূর্ণ।”

তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনসহ বিভিন্ন দিক থেকে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সমীকরণ ব্যাখ্যা করেন এবং বললেন, “চীন ও ভারত উভয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ভারসাম্য রক্ষা অত্যন্ত জরুরি।”

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জহির উদ্দীন স্বপন বলেন, “আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন দরকার যাতে পররাষ্ট্রনীতিতে সামঞ্জস্য আসে। আমরা একটি আমদানি নির্ভর অর্থনীতি। বৈদেশিক মুদ্রার উৎস রেমিট্যান্স ও তৈরি পোশাক শিল্প।”

তিনি সার্ক অঞ্চলের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “খেলাধুলার মাঠ থেকে সমুদ্রের মাধ্যমে অর্থনৈতিক পরিবহন পর্যন্ত আমাদের অবস্থান অত্যন্ত কৌশলগত।”

স্বপন বলেন, আগামী নির্বাচনে যেই ক্ষমতায় আসুক, তাকে এ সব বিষয় মাথায় রেখে পররাষ্ট্রনীতি গড়তে হবে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ভবিষ্যতে আরও কার্যকর ও বহুমুখী করার জন্য এই ধরনের আলোচনার গুরুত্ব অনেক বেশি।

RELATED NEWS

Latest News