Tuesday, October 28, 2025
Homeজাতীয়জাল ওয়ার্ক পারমিটের ছড়াছড়ি: সার্বিয়া ও উত্তর মেসিডোনিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমবাজার ঝুঁকিতে

জাল ওয়ার্ক পারমিটের ছড়াছড়ি: সার্বিয়া ও উত্তর মেসিডোনিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমবাজার ঝুঁকিতে

ভুয়া কাগজপত্রের কারণে দুই দেশই বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া বন্ধ রেখেছে; জালিয়াতি না থামলে পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা

পূর্ব ইউরোপের দুটি দেশ সার্বিয়া এবং উত্তর মেসিডোনিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার গুরুতর হুমকির মুখে পড়েছে। ভিসার আবেদনে ব্যাপকভাবে জাল ওয়ার্ক পারমিট ব্যবহারের কারণে দেশ দুটি বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা ইস্যু করা স্থগিত রেখেছে। জালিয়াতি অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশিদের জন্য শ্রমবাজার পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছে দেশ দুটির দূতাবাস।

কূটনৈতিক সূত্র মতে, উত্তর মেসিডোনিয়ার দূতাবাসে বাংলাদেশি ভিসা আবেদনকারীদের জমা দেওয়া প্রায় ৯০ শতাংশ ওয়ার্ক পারমিট জাল বলে প্রমাণিত হয়েছে। সার্বিয়ার ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি একই। গত দুই মাস ধরে দেশ দুটি বাংলাদেশিদের কোনো ওয়ার্ক পারমিট ইস্যু করেনি। তা সত্ত্বেও, নতুন ভিসার আবেদনে এখনও জাল ওয়ার্ক পারমিট ব্যবহার করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে দেশ দুটি শিগগিরই বাংলাদেশিদের জন্য ওয়ার্ক ভিসা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করতে পারে।

সম্প্রতি, উত্তর মেসিডোনিয়ার পুলিশ বাংলাদেশি একটি মানব পাচারকারী চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের মধ্যে দুজনের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং একজনের বাড়ি সিলেটে। বিষয়টি নিয়ে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে, যেখানে সিদ্ধান্ত হয় যে গ্রেপ্তারকৃত পাচারকারীদের বিচার শেষে কারাদণ্ড বা নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।

এদিকে, সার্বিয়া ও উত্তর মেসিডোনিয়ার দূতাবাসগুলো জানিয়েছে, ভিসার আবেদনে শুধুমাত্র জাল ওয়ার্ক পারমিটই নয়, একটি প্রতারক চক্র সার্বিয়ার জাল ভিসা স্টিকারও তৈরি করছে, যা কর্মী এবং কর্তৃপক্ষ উভয়কেই ধোঁকা দিচ্ছে। এই প্রতারকরা চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজারকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে।

বিদেশে কর্মী ভিসায় কাউকে পাঠাতে হলে ওয়ার্ক পারমিট, ভিসা এবং জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) স্মার্ট কার্ড থাকা বাধ্যতামূলক। প্রতারক চক্রগুলো প্রথমে জাল ওয়ার্ক পারমিট তৈরি করে ভিসার জন্য আবেদন করে। সেই আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলে তারা জাল ভিসা স্টিকার তৈরি করে পাসপোর্টে লাগিয়ে দেয়। এরপর সেই জাল ভিসার মাধ্যমেই বিএমইটি থেকে স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ করে বিভিন্ন ইউরোপীয় গন্তব্যে কর্মীদের পাঠিয়ে দেয়। তবে জাল ভিসার কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ব্যক্তিরা ইমিগ্রেশনে আটক হন।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এই প্রতারক চক্রগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য দেশে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের টার্গেট করে এবং উচ্চ বেতনের চাকরি ও উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখায়।

ভুক্তভোগীদের একজন, মাজেদুল ইসলাম বলেন, “গত মে মাসে আমি সার্বিয়ার ওয়ার্ক ভিসার জন্য অনলাইনে আবেদন করি। আমার আবেদনটি দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষমাণ তালিকায় ছিল। সম্প্রতি, এজেন্সি আমার অ্যাপ্লিকেশন আইডির পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে ফেলে। এরপর তারা দাবি করে, এক মাসের মধ্যে অনুমোদন এবং স্টিকার ভিসা পাইয়ে দেবে।”

কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি একটি প্রতারণা। জাল ওয়ার্ক পারমিটের ওপর ভিত্তি করে আবেদন করায় ভিসা কখনোই অনুমোদিত হয়নি। এখন প্রতারকরা জাল অনুমোদনপত্র ও ভিসা স্টিকার দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত উত্তর মেসিডোনিয়ার রাষ্ট্রদূত (বাংলাদেশেও দায়িত্বপ্রাপ্ত) স্লোবোদান উশুনোভ বলেন, “গত দুই মাস ধরে উত্তর মেসিডোনিয়া বাংলাদেশিদের কোনো ওয়ার্ক পারমিট দেয়নি। তা সত্ত্বেও, কিছু অসাধু চক্র ক্রমাগত জাল পারমিট দিয়ে আবেদন করছে। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে আমরা শিগগিরই বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা দেওয়া সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেব।”

RELATED NEWS

Latest News