গৌহাটির বারসাপারা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের খুব কাছে গিয়েও শেষ পর্যন্ত হার মানল বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। বিতর্কিত এক সিদ্ধান্তে ম্যাচের মোড় ঘুরে যায়, যা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
১৫তম ওভারে ইংল্যান্ড অধিনায়ক হিদার নাইট যখন ১৩ রানে ব্যাট করছিলেন, ফাহিমা খাতুনের বলে শরনা আক্তার সামনের দিকে ডাইভ দিয়ে ক্যাচ ধরেন। মাঠে সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে ফেটে পড়েন বাংলাদেশি খেলোয়াড়রা। নাইটও তখন হাঁটা শুরু করে দিয়েছিলেন। কিন্তু অন-ফিল্ড আম্পায়াররা তৃতীয় আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিলেন।
দীর্ঘ রিভিউ শেষে ঘোষণা আসে — ‘ইনকনক্লুসিভ’। রিপ্লেতে দেখা যায়, বল মাটিতে ছুঁয়ে যেতে পারে, আর স্পষ্ট প্রমাণ না থাকায় ব্যাটারের পক্ষে সিদ্ধান্ত যায়। সেই সুযোগে বেঁচে যান হিদার নাইট।
এই সুযোগটাই কাজে লাগান ইংল্যান্ড অধিনায়ক। ১১১ বলে ৭৯ রানে অপরাজিত থেকে দলকে ৪ উইকেটে জয় এনে দেন তিনি। আর বাংলাদেশ হারায় প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের স্বপ্ন।
ম্যাচ শেষে হিদার নাইট বলেন, “আমি ভেবেছিলাম আউট হয়েছি। পরে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাই। সারা বছর কঠিন সময় কাটিয়েছি, আজ হয়তো ভাগ্যটা আমার পক্ষে ছিল।”
বাংলাদেশের হয়ে তিন উইকেট নেওয়া ফাহিমা খাতুন বলেন, “আমরা নিশ্চিত ছিলাম এটি আউট। ওই মুহূর্তে ওর উইকেটটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সিদ্ধান্তটা না গেলে খেলার দৃশ্যপট বদলে যেত।”
এর আগে সপ্তম ওভারে মারুফা আক্তারের এক তীব্র ইনসুইং বলে নাইট এলবিডব্লিউ হন, কিন্তু রিভিউতে বেঁচে যান। আরও একটি কট-বিহাইন্ড আবেদনও ‘ইনকনক্লুসিভ’ বলে খারিজ হয়।
নাইট পরে হাসতে হাসতে বলেন, “এক ইনিংসে তিনবার আউট হয়ে আবার বেঁচে যাওয়া আমার জীবনে প্রথম।”
বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য এখানেই শেষ নয়। দুর্দান্ত বোলিং করা মারুফা আক্তার (৫ ওভারে ২৮ রানে ২ উইকেট) ইনজুরিতে পড়ে আর বোলিং করতে পারেননি।
ফাহিমা বলেন, “আমরা প্রতিপক্ষ বড় না ছোট, সেটা ভেবে খেলিনি। যা আমাদের হাতে ছিল না, সেটি নিয়ে কিছু বলার নেই।”
শোভনা মোস্তারির প্রথম বিশ্বকাপ ফিফটি, রাবেয়া খানের লেট ক্যামিও—সব মিলিয়ে লড়াইটা ছিল জমজমাট। ১৭৮ রানের সংগ্রহ নিয়ে জয়ের আশা ছিল জাগ্রত, কিন্তু ভাগ্যের খেলায় তা অধরাই রয়ে গেল।
বাংলাদেশ নারী দলের এই হার স্মরণ করিয়ে দিল ক্রিকেটে এক চিরন্তন সত্য — কখনও কখনও সব কিছু ঠিক করেও ফলাফল মেলে না, যদি ভাগ্য সঙ্গে না থাকে।
