Sunday, October 19, 2025
Homeখেলাধুলাবাংলাদেশের নারী ফুটবল: গ্রাউন্ড থেকে আন্তর্জাতিক সাফল্যের পথে

বাংলাদেশের নারী ফুটবল: গ্রাউন্ড থেকে আন্তর্জাতিক সাফল্যের পথে

বছরব্যাপী পরিকল্পনা ও জেলা পর্যায়ের প্রতিভা খোঁজের মাধ্যমে জাতীয় দল গঠনের কৌশল

বাংলাদেশের নারী ফুটবল ধীরে ধীরে দেশের অন্যতম সফল ক্রীড়া অর্জনের গল্প গড়ে তুলেছে। জাতীয় দল থেকে শুরু করে যুব পর্যায়ের দল পর্যন্ত তাদের ধারাবাহিক উন্নয়ন আকস্মিক নয়। এটি বছরব্যাপী পরিকল্পনা, ধৈর্যশীল বিনিয়োগ এবং সুসংগঠিত ব্যবস্থাপনার ফল।

এই অগ্রগতির মূল ভিত্তি হল একটি শক্তিশালী গ্রাউন্ডস্র্টাকচার, যা জাতীয় দলের জন্য নিয়মিত প্রতিভা সরবরাহ করে। বাংলাদেশের ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) এর নারী বিভাগ, যার নেতৃত্বে আছেন চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ, প্রায় দশ বছর ধরে এই পরিবর্তন তত্ত্বাবধান করছেন।

কিরণ দৈনিক সানের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানালেন, ২০১৫ সাল থেকে জাপান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের স্পনসরশিপে জেএফএ কাপ আয়োজন করা হচ্ছে। এটি মূলত একটি জাতীয় প্রতিভা খোঁজ কর্মসূচি। প্রতি বছর ৬৪ জেলার মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ জেলা অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতার দুটি ধাপ আছে — প্রাথমিক এবং চূড়ান্ত রাউন্ড। বাফুফে কোচরা দেশজুড়ে ঘুরে সম্ভাব্য খেলোয়াড়দের খুঁজে বের করেন।

প্রতিবছর এই বিশাল প্রতিভার মধ্য থেকে ৫০ থেকে ৬০ জন খেলোয়াড় কেন্দ্রীয় ডাটাবেসে সংরক্ষণ করা হয়। কিরণ বলেন, প্রাথমিক নির্বাচন অস্থায়ী। চূড়ান্ত তালিকা আরও একটি মূল্যায়নের পর তৈরি হয়। এরপর এই খেলোয়াড়রা বয়সভিত্তিক এবং সিনিয়র দলগুলোতে যোগ দেয়।

তবে টেকসই সিস্টেম তৈরি করা সহজ হয়নি। কিরণ উল্লেখ করেন, বাফুফে ভবনের চতুর্থ তলায় জায়গার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে সব খেলোয়াড়কে একসঙ্গে থাকার এবং খাবারের ব্যবস্থা করা কঠিন। বয়সভিত্তিক দলগুলোর চাহিদা অনুযায়ী খেলোয়াড়দের ক্যাম্প এবং ট্রায়ালের জন্য ডাকা হয়। এই প্রক্রিয়া চলমান থাকে।

বর্তমানে প্রায় ৭৮ জন খেলোয়াড় সিনিয়র থেকে বয়সভিত্তিক দল পর্যন্ত ঘূর্ণায়মানভাবে বাফুফে ডরমিটরিতে থাকেন।

একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল স্থায়ী প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রের অভাব। কিরণ বলেন, কখনও জাতীয় স্টেডিয়ামে, কখনও বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনায় প্রশিক্ষণ হয়। তবে এই জায়গাগুলো প্রায়ই পুরুষদের ফুটবল কার্যক্রমে ব্যবহৃত হয়, তাই নারী দলের প্রবেশ সীমিত।

তবে শীঘ্রই এটি সহজ হতে পারে। কামালাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে নতুন টার্ফ বসানো হয়েছে। কিরণ আশা করছেন, এটি সম্পূর্ণ কার্যকর হলে নারীদের দলের জন্য একটি সমর্পিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থাকবে।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনায় কিরণ দুইটি মূল ক্ষেত্রকে গুরুত্ব দিয়েছেন — জেলা পর্যায়ের প্রতিভা উন্নয়ন এবং শক্তিশালী দেশি লীগ। তিনি বলেন, জেলা পর্যায়ের প্রতিভা খোঁজ চালিয়ে যেতে হবে। একই সঙ্গে নারী লীগের প্রতিযোগিতামূলকতা বাড়ানো প্রয়োজন। প্রিমিয়ার লীগের ক্লাবগুলোর অংশগ্রহণ এটি পরিবর্তন করবে।

আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার গুরুত্বও কিরণ তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, দলকে শক্তিশালী করতে বছরে অন্তত পাঁচ-ছয়টি ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলা উচিত। প্রশিক্ষণ কেবল ঢাকায় সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। জাপান, কোরিয়া বা চীনের মতো দেশে ক্যাম্প আয়োজন করলে দ্রুত উন্নতি হবে।

পরিকল্পনা, ধৈর্য এবং একনিষ্ঠতার মাধ্যমে বাংলাদেশ নারী ফুটবল বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং প্রমাণ করছে, সাফল্য শুধুমাত্র পদক বা ম্যাচের ফলাফল নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ফল।

  • বিষয়াদি সম্পর্কে আরও পড়ুন:
  • বাফুফে

RELATED NEWS

Latest News