যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে শুল্ক আলোচনা নিয়ে চলমান বৈঠকে উভয় দেশের প্রতিনিধিরা বাণিজ্য সম্পর্কের প্রায় সব দিক নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেছেন বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
ওয়াশিংটন ডিসিতে বুধবার শুরু হওয়া এই তিনদিনব্যাপী বৈঠকের প্রথম দিন শেষে বৃহস্পতিবার তিনি এ তথ্য জানান। আলোচনার দ্বিতীয় পর্ব বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় (বাংলাদেশ সময়) আবার শুরু হয় এবং শুক্রবারও বৈঠক চলবে।
বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা এস কে বশির উদ্দিন। এছাড়া জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান ও ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফাইজ আহমাদ তাইয়েব ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নেন। বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে কৃষি, জ্বালানি, বাণিজ্য ও কপিরাইটবিষয়ক দপ্তরের সিনিয়র প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
বৈঠকের প্রেক্ষাপটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (USTR) এর আমন্ত্রণে বাংলাদেশ এই দ্বিতীয় দফার আলোচনায় অংশ নেয়। আলোচনার মূল বিষয় ছিল পারস্পরিক শুল্ক বিষয়ক একটি চুক্তি।
এর আগে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার ১৪টি দেশের নেতাদের উদ্দেশে একটি চিঠি দেন। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পাঠানো চিঠিতে ট্রাম্প লেখেন, “আপনি যদি মার্কিন বাজারে শুল্ক ও অ-শুল্ক বাধা তুলে নেন এবং বাণিজ্য খোলামেলা করেন, তাহলে আমরা এই চিঠির শর্তাবলি পুনর্বিবেচনা করতে পারি।”
চিঠিতে ট্রাম্প আরও জানান, ২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের যেকোনো পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হবে, যা আলাদা করে সেক্টরভিত্তিক শুল্ক হিসাব ছাড়া প্রযোজ্য হবে।
তিনি লেখেন, “এই ৩৫ শতাংশ হারে শুল্ক বাস্তবিক অর্থে এখনও আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়। তবে বাংলাদেশ বা বাংলাদেশের কোম্পানিগুলো যদি যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে কোনো শুল্ক আরোপ করা হবে না। বরং আমরা দ্রুত ও পেশাদারভাবে সব অনুমোদন নিশ্চিত করব।”
ট্রাম্পের ভাষায়, “আপনারা যুক্তরাষ্ট্রকে কখনো হতাশ করবেন না।”
এই প্রস্তাব বাংলাদেশের জন্য একদিকে যেমন বড় সুযোগ, অন্যদিকে তা নীতি ও প্রস্তুতির নিরিখে জটিলতাও সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। আলোচনার পরবর্তী ধাপে উভয় দেশের প্রতিনিধিরা এই প্রস্তাব ও তার বাস্তবতা নিয়ে আরও বিশদ আলোচনা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বর্তমান বৈঠকটি ভবিষ্যতের বাণিজ্যিক কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বাণিজ্যিক সম্পর্ক নতুন রূপ নিতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।