বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার পাশাপাশি ভিসা সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের জটিলতা নিরসনের উদ্যোগ নিচ্ছে। এই উদ্দেশ্যে দুদেশের মধ্যে আস্থা ও সদিচ্ছার পরিবেশ গড়ে তুলতে কাজ করছে সরকার।
প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী সোমবার ইউএই’র ফেডারেল অথরিটি ফর আইডেন্টিটি, সিটিজেনশিপ, কাস্টমস অ্যান্ড পোর্টস সিকিউরিটির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সুহেইল সাঈদ আল খাইলির সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেন।
আলোচনা শেষে লুৎফে সিদ্দিকী তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে জানান, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই ইস্যুতে দীর্ঘদিন ধরেই গঠনমূলক অবস্থান নেওয়া হয়নি। ফলে ভিসা সংক্রান্ত অনিয়ম বেড়েছে এবং বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, “আমাকে জানানো হয়েছে, আমিরাতে ভিসা ও আবাসন নিয়ম ভাঙা ব্যক্তিদের মধ্যে ২৫ শতাংশই বাংলাদেশি। এটি উদ্বেগজনক। এর শিকড় দেশের মধ্যেই, বিশেষ করে রিক্রুটমেন্ট পর্যায়ে।”
বিশেষ দূত আরও জানান, বাংলাদেশি কর্মীদের তুলনায় অন্য দেশের নাগরিকদের তুলনামূলক কম খরচে বিদেশযাত্রার সুযোগ থাকে। অথচ বাংলাদেশি অভিবাসীদের জন্য বিদেশগমন ব্যয় অনেক বেশি এবং তারা যে বেতন পান, তা দিয়ে এই ব্যয় পুষিয়ে ওঠা কঠিন হয়ে পড়ে।
তিনি অভিযোগ করেন, “আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে অপরাধমূলক আচরণের মূল কারণগুলো দূর করার ক্ষেত্রে প্রকৃত কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।”
লুৎফে সিদ্দিকীর মতে, ভিসা নীতিতে ছাড়ের সময়ও নিয়ম লঙ্ঘনের হার বেড়েছে। অনেকেই জাল সনদপত্র জমা দেন, যার মধ্যে সরকারি প্রত্যয়নসহ নকল কাগজপত্রও রয়েছে।
একটি স্থানীয় নিয়োগ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথোপকথনে তিনি এসব তথ্যের প্রমাণ পেয়েছেন বলেও জানান।
তিনি আরও বলেন, “ভিসা ইস্যুতে বিভিন্ন বিভাগের অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো আলাদা করে দেখার পরিকল্পনা আছে, যেমন—পারিবারিক ভিসা, পর্যটন ভিসা, দক্ষতা অনুযায়ী কর্মসংস্থান ভিসা, সী-ফেরার ভিসা ইত্যাদি।”
তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, “এই অনিয়মগুলো দমন করতে হলে সকল পক্ষকে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। কারণ এই অনিয়মের ছায়া অনেক দীর্ঘ।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সমস্যা নিরসনে শুধু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা নয়, বরং দেশীয় পর্যায়েও অভিবাসন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি।