নেপাল থেকে ভারতের ট্রান্সমিশন লাইন ব্যবহার করে ৩৮ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আনুষ্ঠানিকভাবে আমদানি শুরু করেছে বাংলাদেশ। রবিবার (১৫ জুন) দুপুর ১২টা থেকে এই বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)।
বিপিডিবির জনসংযোগ পরিচালক শামীম হাসান বলেন, “আজ দুপুর থেকে আমরা নেপাল থেকে গড়ে ৩৮ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ পেতে শুরু করেছি।”
বিপিডিবির সদস্য (উৎপাদন) মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, “চুক্তি অনুযায়ী ১৫ জুন থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত নেপাল এই পরিমাণ বিদ্যুৎ বাংলাদেশে সরবরাহ করবে। এই সময় বাংলাদেশে তীব্র গরম ও বিদ্যুতের চাহিদা বেশি থাকে।”
প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বা ইউনিট বিদ্যুতের জন্য বাংলাদেশকে ভারতীয় ট্রান্সমিশন খরচসহ প্রায় ৭ টাকা দিতে হবে।
এই বিদ্যুৎ আমদানি হচ্ছে ২০২৪ সালের ৩ অক্টোবর নেপালের কাঠমান্ডুতে স্বাক্ষরিত ত্রিপক্ষীয় চুক্তির আওতায়। চুক্তিটি স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি), নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটি (NEA) এবং ভারতের এনটিপিসি বিদ্যুৎ ব্যবসা নিগম লিমিটেড (NVVN)।
এর আগে ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে একদিনের জন্য বাংলাদেশে ৩৮ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ সরবরাহ করেছিল নেপাল, যা ত্রিপক্ষীয় বিদ্যুৎ সহযোগিতায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়।
গ্রীষ্মকালে নেপালের নদীগুলোতে বর্ষার পানির কারণে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। অপরদিকে, বাংলাদেশে এই সময় বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যায়। এই বাস্তবতাকে কেন্দ্র করেই জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহের চুক্তি কার্যকর করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফউজুল কবির খান বলেন, “আমরা জলবিদ্যুৎ আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় সব লজিস্টিক ও কারিগরি প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই জ্বালানি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।”
ভবিষ্যতের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “শীতে নেপালের জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যায়, আর বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদাও হ্রাস পায়। তাই আমরা নেপালে বিদ্যুৎ রপ্তানির প্রস্তাব পাঠানোর পরিকল্পনা করছি।”
তিনি জানান, শিগগিরই বাংলাদেশে নেপালের জ্বালানি মন্ত্রীর সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে দুই দেশের মধ্যে দ্বিমুখী বিদ্যুৎ সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা শুরু হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই উদ্যোগ শুধু বিদ্যুৎ সরবরাহে বৈচিত্র্য আনবে না, বরং আঞ্চলিক জ্বালানি নিরাপত্তা ও পরিবেশগত ভারসাম্যেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।