Friday, September 26, 2025
Homeজাতীয়বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি ৫৭ লাখ, উৎপাদনশীল বয়সে দুই-তৃতীয়াংশ

বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি ৫৭ লাখ, উৎপাদনশীল বয়সে দুই-তৃতীয়াংশ

জনসংখ্যা রিপোর্টে যৌন ও প্রজনন অধিকার সংকটের ওপর জোর, স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বাড়ানোর আহ্বান ইউএনএফপিএর

বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৭ কোটি ৫৭ লাখ বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ)। এর মধ্যে অর্ধেক নারী এবং দুই-তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ প্রায় ১১ কোটি ৫০ লাখ মানুষ কর্মক্ষম বয়স (১৫-৬৪ বছর) শ্রেণিতে পড়েন। এই পরিসংখ্যান দেশের জন্য একটি ‘জনমিতিক সুযোগের জানালা’ তৈরি করছে বলে মনে করছে ইউএনএফপিএ।

সোমবার রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত জাতিসংঘ ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইউএনএফপিএ-র বাংলাদেশ প্রতিনিধি ক্যাথেরিন ব্রিন কামকং বার্ষিক ‘স্টেট অব ওয়ার্ল্ড পপুলেশন (এসডব্লিউওপি) ২০২৫’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।

তিনি জানান, দেশের ৭ শতাংশ, অর্থাৎ ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ ৬৫ বছরের বেশি বয়সী। যা প্রবীণ জনসংখ্যা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।

এছাড়া, দেশের মোট জনসংখ্যার ১৯ শতাংশ কিশোর-কিশোরী (প্রায় ৩ কোটি ৩০ লাখ) এবং ১০-২৪ বছর বয়সী তরুণ জনগোষ্ঠী ২৮ শতাংশ, যা প্রায় ৫ কোটি।

এ বছরের প্রতিবেদনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল, “The Real Fertility Crisis – The Pursuit of Reproductive Agency in a Changing World”। এতে বলা হয়, প্রকৃত সমস্যা জন্মহার বেশি বা কম হওয়া নয়, বরং এটি এক ধরনের ‘প্রজনন অধিকার সংকট’।

ক্যাথেরিন ব্রিন কামকং বলেন, “বিশ্বজুড়ে এবং বাংলাদেশেও বহু নারী ও তরুণ-তরুণী এখনো তাদের প্রজনন বিষয়ক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সক্ষম নন। কারণ, এর পেছনে রয়েছে কাঠামোগত, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বাধা।”

প্রতিবেদন অনুযায়ী, উন্নত দেশ যেমন দক্ষিণ কোরিয়ায় নারীদের গড় সন্তান সংখ্যা ০.৮, যা বিশ্বে সর্বনিম্ন। অপরদিকে নাইজারে এই হার ৫.৮। বাংলাদেশে এটি বর্তমানে ২.১। তবে কিছু অঞ্চলে এখনো কিশোরীদের মাতৃত্বের হার উদ্বেগজনকভাবে বেশি।

প্রারম্ভিক বিবাহ, যৌনতা বিষয়ক শিক্ষা ও গর্ভনিরোধক সরবরাহের সীমাবদ্ধতাই এর মূল কারণ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

ক্যাথেরিন আরও বলেন, “বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতে জনগণের ব্যক্তিগত ব্যয় অনেক বেশি। সরকার জিডিপির মাত্র ০.৭ শতাংশ এবং মোট বাজেটের ২ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করছে। আমরা চাই, তা বৃদ্ধি পেয়ে জিডিপির ৫ শতাংশ এবং মোট বাজেটের ১৫ শতাংশ হোক।”

তিনি বলেন, বাজেট বৃদ্ধি পেলে দেশে দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী, বিশেষ করে মিডওয়াইফ নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও নিয়োগ ধরে রাখা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও বিভিন্ন গর্ভনিরোধক সরবরাহও নিশ্চিত করা যাবে, যা নারীদের জন্য বিকল্পের সুযোগ সৃষ্টি করবে।

বিশ্বের ১৪টি দেশের গবেষণা ও জরিপের ভিত্তিতে তৈরি এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেশিরভাগ মানুষ দুজন সন্তান চায়, কিন্তু অনেকেই আর্থ-সামাজিক কারণে এই সংখ্যা পূরণ করতে পারেন না। কেউ আবার পরিকল্পনার চেয়েও বেশি সন্তানের মুখোমুখি হন, অথচ সচেতনতার অভাবে প্রয়োজনীয় সেবা পান না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রতিবেদন বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের জন্য সময়োপযোগী বার্তা বহন করে। কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা কাজে লাগাতে এখনই স্বাস্থ্য ও প্রজনন অধিকার নিশ্চিতে বাস্তবভিত্তিক উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

RELATED NEWS

Latest News