ডেইলি প্রতিদিনের বাণী রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১৭ মে ২০২৫, ০৬:০৬
নিজস্ব প্রতিবেদক
গত ১৬ বছর ধরে একটানা ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ এখন এক নতুন রাজনৈতিক যাত্রায় পা রেখেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “আমরা যা নষ্ট হয়েছে, তা আবার গড়ে তুলছি। সঠিক পথে এগোচ্ছি, জনগণ আমাদের পাশে আছে।”
২০২৪ সালের আগস্টে বড় ধরনের গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। তার দীর্ঘ শাসনকালকে ইউনূস “এক ধরনের স্বৈরশাসন” হিসেবে অভিহিত করেছেন। এই সময়কালে রাষ্ট্রক্ষমতার অপব্যবহার, অর্থ পাচার, মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ নানা অভিযোগ সামনে এসেছে। একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি বছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার দেশ থেকে পাচার হয়েছে। এমনকি খুন, অপহরণ ও গণহত্যার মামলাও হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে, যদিও তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর নতুন প্রশাসন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ ও সংবিধান সংস্কারের লক্ষ্যে একাধিক কমিশন গঠন করা হয়েছে। এসব কমিশনে রয়েছেন দেশি-বিদেশি গবেষক, শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞরা।
এ সকল প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’, যার অধীনে এখন পর্যন্ত ১৬৬টি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। দেশের ৩৫টি রাজনৈতিক দল এই প্রক্রিয়ায় মতামত দিয়েছে। এই কমিশন ‘জুলাই সনদ’ নামে একটি রোডম্যাপ তৈরি করছে, যার মাধ্যমে একটি “নতুন বাংলাদেশ” গঠনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে সবদিক থেকেই যে একমত হয়েছে সমাজ তা নয়। তৈরি পোশাক শিল্প, শিক্ষা ও নারীর অধিকার ইস্যুতে রয়েছে মতপার্থক্য। বিশেষ করে নারীদের উত্তরাধিকার আইনে পরিবর্তনের প্রস্তাব নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন অনেকে।
এর মধ্যেও অনেকেই আশাবাদী। ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রিয়াজ জানান, “বিচারপতি নিয়োগে স্বাধীনতা এসেছে, এটি ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত।” তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, আগামী আগস্টের মধ্যেই চূড়ান্ত নীতিমালা চূড়ান্ত হবে।
নির্বাচন নিয়ে আনুষ্ঠানিক আশ্বাস দিয়েছেন ইউনূস। তিনি জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যদিও তিনি নিজে তাতে অংশ নেবেন না।
এই মুহূর্তে দ্রব্যমূল্য ও ব্যাংক খাত কিছুটা স্থিতিশীল হলেও, সামগ্রিক অর্থনীতি এখনো ধীরগতির। রাজনীতিও অস্থির। এক জরিপ অনুযায়ী, দেশের ৬০ শতাংশ মানুষ মনে করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। রাস্তায় বিক্ষোভ এখনো নিয়মিত।
বিক্ষোভকারীদের প্রধান দাবি হচ্ছে আওয়ামী লীগের বিচারের ব্যবস্থা। নির্বাচন কমিশন ১২ মে দলটির নিবন্ধন বাতিল করেছে। ফলে তারা আর কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। তবে দলটির কিছু জনপ্রিয়তা এখনো আছে। দলের শীর্ষ নেতা মোহাম্মদ আরাফাত বলেন, “আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলাম, জঙ্গিরা আমাদের সরিয়ে দিয়েছে। আমরা আমাদের জায়গা ফিরে পাওয়ার জন্য লড়াই চালিয়ে যাব।”
ক্ষমতার বাইরে থেকেও আওয়ামী লীগ এখনো দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখছে। সবকিছু ঠিকঠাক চললে ডিসেম্বরেই নির্বাচন হতে পারে। নতুন নীতিমালার আলোকে সেই নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটাতে পারে।