বাংলাদেশে প্রতি বছর বজ্রপাতের কারণে গড়ে ৩৫০ জন মানুষ প্রাণ হারান বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা সতর্ক করে বলেছেন, জরুরি জনসচেতনতা এবং সময়োপযোগী পূর্বাভাস ব্যবস্থা না থাকলে মৃত্যুর হার আরও বাড়তে পারে।
শনিবার রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক বজ্রপাত নিরাপত্তা দিবস পালন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে পরিচালিত ‘সুফল-২’ প্রকল্প, যা পরিচালনা করছে কেয়ার বাংলাদেশ, কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড, RIMES এবং বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান অনুষ্ঠানে বলেন, “বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো বজ্রপাতকেও একটি দুর্যোগ হিসেবে গণ্য করতে হবে।” তিনি বলেন, “বাস্তবভিত্তিক পূর্বাভাস ও মানুষের আচরণগত পরিবর্তনের মাধ্যমে মৃত্যুহার কমানো সম্ভব।”
আবহাওয়া বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৩৩ লাখ ৬০ হাজার বার বজ্রপাত হয়। বিশেষ করে এপ্রিল-মে মাসে ঝুঁকি সর্বোচ্চ থাকে, তখন খোলা জায়গায় কাজ করা মানুষ বেশি আক্রান্ত হন। সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও সিলেট অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
সুফল-২ প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে প্রায় ১,৭৫০ জন গ্রামীণ কৃষক, নারী ও শিশুদের বজ্রপাত নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এপ্রিল থেকে পরীক্ষামূলকভাবে বজ্রপাত পূর্বাভাস প্রদান শুরু করেছে। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও প্রি-রেকর্ডেড অডিও বার্তার মাধ্যমে এই পূর্বাভাস প্রচার করা হচ্ছে। বক্তারা বলেন, এই পূর্বাভাস ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং বজ্রপাত নিরাপত্তা দিবসকে জাতীয় ক্যালেন্ডারে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
অনুষ্ঠানে একটি র্যালি এবং প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সরকারি কর্মকর্তা, আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ, এনজিও প্রতিনিধি, শিক্ষার্থী ও তরুণ সংগঠনের সদস্যরা অংশ নেন। আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা বলেন, বজ্রপাত সচেতনতা বিষয়টি স্কুল পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং সরকারের বাজেটে পূর্বাভাস ব্যবস্থার উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
আয়োজকরা জানান, ২০২৫ সালের এই আন্তর্জাতিক বজ্রপাত নিরাপত্তা দিবস দেশব্যাপী জনসচেতনতা গড়ে তোলার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হবে, যা বজ্রপাতে 방ানযোগ্য মৃত্যুর হার কমাতে সহায়ক হবে।