Friday, September 5, 2025
Homeজাতীয়বাংলাদেশে অবাধ নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা ও প্রশাসনিক সংস্কারের আহ্বান

বাংলাদেশে অবাধ নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা ও প্রশাসনিক সংস্কারের আহ্বান

গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় পুলিশ ঘাটতি পূরণ, নিরপেক্ষ প্রশাসন ও সমন্বিত নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব

বছরের পর বছর স্বৈরশাসন ও রাজনৈতিক দমন-নিপীড়নের পর বাংলাদেশের মানুষ অবশেষে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচনের স্বপ্ন দেখছে। স্বৈরশাসনের পতন গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিমূলক শাসনের আশা জাগালেও সামনে রয়ে গেছে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা, নির্বাচনী স্বচ্ছতা এবং প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা নিশ্চিত না হলে নিরাপদ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব হবে না।

সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হলো পুলিশ বাহিনীর দুর্বলতা ও অকার্যকারিতা। বিগত স্বৈরশাসনের সময় পুলিশকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছিল। জনসাধারণের ওপর দমন-পীড়ন চালানো এবং বিরোধী মত দমনে পুলিশকে হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগানো হয়। এর ফলে জনগণের মধ্যে পুলিশের প্রতি ক্ষোভ ও অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। সরকারের পতনের পর একাধিক থানায় হামলা হয়েছে, কর্মকর্তারা নিহত হয়েছেন, অনেকে পালিয়েছেন বা বরখাস্ত হয়েছেন। বর্তমান বাহিনী জাতীয় নির্বাচনের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য অপ্রতুল।

নির্বাচন নিরাপত্তার জন্য জরুরি ভিত্তিতে প্রায় ৫০ হাজার অতিরিক্ত পুলিশ নিয়োগের প্রয়োজন। তিন মাসের একটি সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কনস্টেবলদের নির্বাচনকেন্দ্রিক দায়িত্ব পালনের উপযোগী করা সম্ভব। দেশের হাজারো শিক্ষিত ও কর্মক্ষম যুবক স্বেচ্ছায় এই দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। পাশাপাশি প্রায় ৬০ হাজার অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আছেন, যাদের দুই বছরের চুক্তিতে পুনঃনিয়োগ দিয়ে দুই থেকে তিন সপ্তাহের সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে লাগানো যেতে পারে। একই সঙ্গে বর্তমানে প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত কিছু পুলিশ সদস্যকে নির্বাচনী দায়িত্বে পুনর্বিন্যাস করতে হবে।

তবে শুধুমাত্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করলেই অবাধ নির্বাচন সম্ভব নয়। প্রশাসনিক কাঠামোর নিরপেক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাচন কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন একদলীয় শাসনের সময় দলীয় স্বার্থে কাজ করেছেন। ভোট কারচুপি, ব্যালট বাক্সে আগাম ভোট, ভোটার ভয়ভীতি ও ফলাফল প্রভাবিত করার সঙ্গে তারা যুক্ত ছিলেন। সামরিক বাহিনী মাঠে থাকলেও ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণার দায়িত্ব থাকে এই প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের হাতে।

এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় নির্বাচন কমিশনকে দ্রুত নিরপেক্ষ ও দক্ষ কর্মকর্তাদের একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। প্রয়োজনে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত বা বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দিতে হবে। পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাকে নিয়োগ ও দায়িত্ব বণ্টনে যুক্ত করতে হবে।

এদিকে, পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো এখনও নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে। তারা কয়েকটি থানায় হামলা চালিয়ে অস্ত্র লুট করেছে এবং গোপনে পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে। এদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থা, র‌্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে যৌথভাবে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নির্বাচন শুধু রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নয়, এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের মুহূর্ত। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল করা, প্রশাসনিক কাঠামোর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা এবং জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা এখন জরুরি। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে নির্বাচনী ব্যর্থতা, জনঅসন্তোষ এবং নতুন করে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।

এবার যেন ইতিহাস সাক্ষী থাকে, ব্যালটই হবে জনগণের ক্ষমতার প্রতীক, গুলি নয়।

RELATED NEWS

Latest News