বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে (বিএমইউ) দেশে প্রথমবারের মতো চালু হতে যাচ্ছে রোবোটিক পুনর্বাসন কেন্দ্র, যা পক্ষাঘাত ও দীর্ঘমেয়াদি স্নায়ুবিক সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য উন্নতমানের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন সেবা নিশ্চিত করবে।
বৃহস্পতিবার ঢাকার শাহবাগে বিএমইউ-এর সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে পরীক্ষামূলকভাবে কেন্দ্রটির কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।
চীনের কারিগরি সহায়তায় আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে নির্মিত এই রোবোটিক কেন্দ্রটিতে চীনা সরকারের অনুদানে প্রায় ২০ কোটি টাকার রোবোটিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তির বিচারে এটিকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম উন্নত পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
কেন্দ্রে মোট ৬২টি রোবট রয়েছে, যার মধ্যে ২২টি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) চালিত। এই রোবটগুলো প্রতিটি রোগীর অবস্থা অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট ফিজিওথেরাপি ও স্নায়ুবিক পুনর্বাসন সেবা দেবে।
স্ট্রোক, পক্ষাঘাত, স্নায়ুজনিত আঘাত, ফ্রোজেন শোল্ডার, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা ও দুর্ঘটনাজনিত জটিলতায় আক্রান্ত রোগীরা এই কেন্দ্র থেকে উপকার পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
কেন্দ্রটির চালুর আগে চীনের সাতজন বায়োমেডিকেল প্রকৌশলী বাংলাদেশের ২৭ জন চিকিৎসক ও ফিজিওথেরাপিস্টকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
বিএমইউ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরীক্ষামূলক পর্যায়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পেশাজীবীরা হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন। সফলভাবে এ মূল্যায়ন শেষ হলে পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম চালু করা হবে।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে গণআন্দোলনে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত রোগীদের জন্য এই কেন্দ্রে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হবে। সরকার ও বিএমইউ এই প্রকল্পটিকে অগ্রাধিকারভিত্তিক হিসেবে দেখছে।
কেন্দ্রটি শুধু বিশেষ একটি গোষ্ঠীর জন্য সীমাবদ্ধ থাকবে না। ধাপে ধাপে সাধারণ জনগণের জন্যও এর সেবা উন্মুক্ত করা হবে। এ বিষয়ে একটি কাঠামোগত নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে।
রোগীদের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনায় নিয়ে চিকিৎসা ব্যয় সাশ্রয়ী রাখার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।
বিএমইউ-এর ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আবদুস শাকুর বলেন, “দক্ষিণ এশিয়াতেও রোবোটিক পুনর্বাসন কেন্দ্র এখনো খুবই কম। আমাদের কেন্দ্রে রয়েছে ৬২টি রোবট, যার মধ্যে ২২টি চালিত হবে AI প্রযুক্তিতে। এতে করে রোগীরা আরও নির্ভুল চিকিৎসা পাবে।”
তিনি আরও বলেন, “জুলাই মাসের আন্দোলনে আহত হয়ে দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসনের প্রয়োজন এমন ব্যক্তিদের এই কেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হবে। পাশাপাশি স্ট্রোক, স্নায়ুবিক সমস্যা, পক্ষাঘাত, মাংসপেশির জড়তা, দুর্ঘটনাজনিত জটিলতা থাকা রোগীরাও সেবা পাবেন।”
“আমরা আশা করি, এই কেন্দ্রের মাধ্যমে রোগীরা সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন,” তিনি মন্তব্য করেন।