Sunday, June 22, 2025
Homeঅর্থ-বাণিজ্যঅর্থনৈতিক চাপে বাংলাদেশ, কমছে প্রবৃদ্ধি, বন্ধ হচ্ছে কারখানা

অর্থনৈতিক চাপে বাংলাদেশ, কমছে প্রবৃদ্ধি, বন্ধ হচ্ছে কারখানা

বিশ্বব্যাংক আশঙ্কা করছে প্রবৃদ্ধি কমে হবে ৩.৩ শতাংশ, দুই দশকে সর্বনিম্ন

বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্রমবর্ধমান চাপে রয়েছে। কমছে প্রবৃদ্ধি, বিদেশি বিনিয়োগের হার পড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে, এবং বেকারত্ব বাড়ছে। বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে যে, চলতি অর্থবছরে (২০২৪–২৫) জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৩.৩ শতাংশে নেমে আসতে পারে, যা গত দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এই অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বিদেশি বিনিয়োগ ৭০ শতাংশের বেশি কমে গেছে।

বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ এপ্রিল সংখ্যায় বলা হয়েছে, বিনিয়োগ দুর্বল এবং অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ বাড়তে থাকলে ২০২৫ সালের মধ্যে আরও ৩০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যের কবলে পড়তে পারে।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দুর্নীতিপরায়ণ ব্যবসায়ী চক্রের অনেকেই পালিয়ে গেছে। অর্থনীতি পুনর্গঠনের বড় সুযোগ ছিল, যা নষ্ট হয়েছে। পুরোনো অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই চলতে থাকায় ফলাফল ইতিবাচক হয়নি।”

শিল্প পুলিশ জানিয়েছে, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী ও সাভার-ধামরাই অঞ্চলে প্রায় ১০০ কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এসব বন্ধ কারখানায় কর্মরত ৬০ হাজারের বেশি শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন।

তদন্তে জানা গেছে, আগের সরকারের আমলে বিনিয়োগকারী অনেকেই বর্তমানে কারাগারে, আত্মগোপনে বা বিদেশে পলাতক। মূলধনের অভাব ও ক্রয় আদেশ না থাকায় কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে।

আনু মুহাম্মদ বলেন, “কারখানা বন্ধ করে পালিয়ে যাওয়া অনেকেই আগের সরকারের সময়ে বিশেষ সুবিধা পেয়েছিল। তাদের জবাবদিহির পাশাপাশি শ্রমিকদের জন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না রাখাই বড় ব্যর্থতা।”

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক আশরাফ আহমেদ বলেন, “এলএনজি আমদানিনির্ভর কারখানা চালানো এখন খুব কঠিন হয়ে গেছে। গ্যাস সংকটে উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। এর ওপর ব্যাংক ঋণপ্রবাহ দুর্বল হওয়ায় উদ্যোক্তারা মূলধন পাচ্ছেন না, ফলে বেতন দিতে পারছেন না।”

তিনি আরও বলেন, “আইনের শাসন কিছুটা ফিরলেও ব্যাংক খাতের দুর্বলতা ও উচ্চ সুদের কারণে ব্যবসা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বর্তমানে অনেক ব্যাংক ব্যবসায়ীদের ঋণ দিতে পারছে না।”

জ্বালানি খাতে সংকট আরও গভীর। প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ চাহিদার তুলনায় অনেক কম। পেট্রোবাংলার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “আগের সরকার আন্তর্জাতিক টেন্ডার দিয়েছিল, কিন্তু আগ্রহ ছিল না। নতুন সরকার সময় বাড়ালেও এখনো সাড়া মেলেনি। ফলে বঙ্গোপসাগরের সম্ভাবনাময় ২৬টি ব্লক থেকেও কোনো গ্যাস উত্তোলনের সম্ভাবনা নেই।”

পলিসি ডায়ালগ সেন্টারের গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, “রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। নির্বাচনের আগে কোনো প্রতিষ্ঠান চুক্তিতে যাবে না, যদি না নীতিগত নিশ্চয়তা থাকে।”

তিনি আরও বলেন, “গত ১০ মাসে ২১ লাখ মানুষ কাজ হারিয়েছেন, যার মধ্যে ১৮ লাখ নারী। তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা না থাকলে এই সংকট আরও গভীর হবে।”

মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, “বিনিয়োগ, ব্যাংকিং ও জ্বালানির যে সংকট চলছে তা আগের সরকারের দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনার ফল।”

তার মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে যারা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী, তারাও খুব সতর্কভাবে এগোচ্ছেন। আগামীর বিনিয়োগ নির্ভর করবে নির্বাচনের পর নতুন সরকারের নীতির ওপর।

বিশ্লেষকদের মতে, এখনই দৃশ্যমান সংস্কার ও স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত না হলে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ আরও বেড়ে যেতে পারে।

RELATED NEWS

Latest News