অস্ট্রেলিয়ায় ১৬ বছরের কম বয়সী ব্যবহারকারীদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী একটি যুগান্তকারী আইন মেনে চলার ঘোষণা দিয়েছে প্রযুক্তি জায়ান্ট মেটা ও টিকটক। তবে মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠান দুটি জানিয়েছে, এই আইন প্রয়োগ করা অত্যন্ত কঠিন হতে পারে।
আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে অস্ট্রেলিয়ায় ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোকে ১৬ বছরের কম বয়সী ব্যবহারকারীদের সরিয়ে ফেলতে বাধ্য করা হবে। বিশ্বজুড়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো যখন সামাজিক মাধ্যমের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে, তখন অস্ট্রেলিয়ার এই ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয় কি না, তা নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
মঙ্গলবার একটি সিনেট শুনানিতে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা এবং টিকটক উভয়ই জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞাটি পর্যবেক্ষণ করা কঠিন হলেও তারা আইন মেনে চলবে।
টিকটকের অস্ট্রেলিয়া পলিসি প্রধান এলা উডস-জয়েস বলেন, “সহজ কথায়, টিকটক আইন মেনে চলবে এবং আমাদের আইনি বাধ্যবাধকতা পূরণ করবে।”
কাগজে-কলমে, এই নিষেধাজ্ঞা বিশ্বের সবচেয়ে কঠোরগুলোর মধ্যে একটি। কিন্তু এটি কার্যকর হতে আর মাত্র এক মাসের কিছু বেশি সময় বাকি থাকলেও, এর প্রয়োগ এবং সংস্থাগুলোর দায়বদ্ধতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে অস্ট্রেলিয়া এখনও কাজ করছে।
টিকটক সতর্ক করে বলেছে, বয়সের ওপর এই “স্থূল” নিষেধাজ্ঞার ফলে বেশ কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতি দেখা দিতে পারে। উডস-জয়েস বলেন, “বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে কম বয়সীরা ইন্টারনেটের অন্ধকার জগতে চলে যেতে পারে, যেখানে তাদের জন্য কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থা নেই।”
মেটার পলিসি ডিরেক্টর মিয়া গার্লিক শুনানিতে জানান, তার প্রতিষ্ঠান এখনও “অসংখ্য চ্যালেঞ্জ” মোকাবিলার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ১০ ডিসেম্বরের সময়সীমার মধ্যে ১৬ বছরের কম বয়সী লক্ষ লক্ষ ব্যবহারকারীকে সরিয়ে ফেলার জন্য কাজ করবে মেটা। তবে এই ধরনের অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করে মুছে ফেলা একটি “গুরুত্বপূর্ণ নতুন প্রকৌশলগত এবং বয়স যাচাইয়ের চ্যালেঞ্জ” তৈরি করেছে।
কর্মকর্তারা এর আগে বলেছিলেন, সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলোকে সমস্ত ব্যবহারকারীর বয়স যাচাই করতে হবে না, তবে অপ্রাপ্তবয়স্কদের শনাক্ত এবং তাদের অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করার জন্য “যৌক্তিক পদক্ষেপ” নিতে হবে। আইন অমান্যকারী সংস্থাগুলোকে ৪ কোটি ৯৫ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার (প্রায় ৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে।
প্রযুক্তি সংস্থাগুলো একযোগে অস্ট্রেলিয়ার এই নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করেছে এবং এটিকে “অস্পষ্ট”, “সমস্যাযুক্ত” এবং “তড়িঘড়ি করে তৈরি” বলে অভিহিত করেছে।
ভিডিও স্ট্রিমিং সাইট ইউটিউব, যা এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে, চলতি মাসে বলেছে যে অস্ট্রেলিয়ার প্রচেষ্টাটি মহৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হলেও এর পরিকল্পনা দুর্বল। ইউটিউবের স্থানীয় মুখপাত্র র্যাচেল লর্ড বলেন, “এই আইনটি কেবল প্রয়োগ করাই কঠিন হবে না, এটি শিশুদের অনলাইনে নিরাপদ রাখার প্রতিশ্রুতিও পূরণ করবে না।”
অস্ট্রেলিয়ার অনলাইন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছে যে মেসেজিং পরিষেবা হোয়াটসঅ্যাপ, স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম টুইচ এবং গেমিং সাইট রোবলক্সও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসতে পারে।
