রোহিঙ্গা সংকট আর কোনো দূরবর্তী ইস্যু নয়, এটি সরাসরি আসিয়ানের জন্য একটি আঞ্চলিক উদ্বেগ—এমন মন্তব্য করেছে আসিয়ান পার্লামেন্টারিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস (এপিএইচআর)। সংগঠনটি জানিয়েছে, আসিয়ান যদি নীরব থাকে, তবে এর বড় মূল্য দিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে মানবপাচার, অস্ত্র ও মাদক চোরাচালান এবং শরণার্থীদের অব্যাহত প্রবাহ, যা গোটা অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে এপিএইচআর জানায়, রোহিঙ্গা ইস্যুতে যৌথ পদক্ষেপের জন্য একটি আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্ম গঠন করতে হবে। এর মাধ্যমে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা ও সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন সম্ভব হবে, যা আসিয়ানের সব সদস্য রাষ্ট্রের যৌথ দায়িত্বকে প্রতিফলিত করবে।
১ থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনের সাবেক ও বর্তমান সংসদ সদস্যদের একটি এপিএইচআর প্রতিনিধিদল কক্সবাজার সফর করে। তারা শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকট ও স্থানীয়দের ওপর এর প্রভাব সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করেন।
এপিএইচআর জানিয়েছে, সংকটটি ইতিমধ্যে চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি সতর্ক করেছে, ২০২৫ সালের নভেম্বরের পর পর্যাপ্ত অর্থ না পেলে খাদ্য রেশন বন্ধ হয়ে যাবে। মাসে অন্তত ১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার না মিললে ১৩ লাখ মানুষের খাদ্য সহায়তা ঝুঁকির মুখে পড়বে।
প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও সহায়তা দেওয়ার জন্য। তারা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে এবং টেকসই সমাধানের বিষয়ে সুপারিশ পেশ করে।
এপিএইচআর রোহিঙ্গাদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে একটি আসিয়ান মানবিক তহবিল গঠনের আহ্বান জানিয়েছে, যাতে খাদ্যসংকট প্রতিরোধ ও জীবনরক্ষাকারী সহায়তা পৌঁছানো যায়।
সংগঠনটি আরও বলেছে, শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত না করলে রোহিঙ্গা যুবকদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য স্বীকৃত স্কুলিং ও দক্ষতা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা অপরিহার্য। এই ক্ষেত্রে আসিয়ানকে বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ফিলিপাইন সরকার রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ দিয়েছে। এপিএইচআর মনে করে, অন্যান্য আসিয়ান রাষ্ট্রগুলোও এই উদ্যোগ অনুসরণ করতে পারে।
এপিএইচআর কো-চেয়ার চার্লস সান্তিয়াগো বলেন, “রোহিঙ্গা সংকট শুরু হওয়ার আট বছর পরও আসিয়ান এটিকে নিজেদের সমস্যা হিসেবে দেখছে না। আমরা আবারও আহ্বান জানাই মানবিক তহবিল গঠনের জন্য। নীরব থাকলে এর খেসারত দেবে পুরো অঞ্চল।”
এপিএইচআর বোর্ড সদস্য ওয়ং চেন বলেন, “মিয়ানমার আসিয়ানের সদস্য রাষ্ট্র, তাই শরণার্থীদের জন্য যথেষ্ট খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করা যৌথ দায়িত্ব। বাজেট ঘাটতির কারণে শিবিরগুলোতে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।”
অন্য সদস্য রাউল মানুয়েল বলেন, “রোহিঙ্গা তরুণদের শিক্ষার সুযোগ না দিলে তাদের ভবিষ্যৎ বিপন্ন হবে। মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনের পথ খুলে দিতে আসিয়ানকে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে হবে।”
এপিএইচআর জানায়, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে রাজনৈতিক ও মানবিক উদ্যোগে দ্রুত সাড়া দেওয়া জরুরি। অন্যথায় এ সমস্যার প্রভাব গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করবে।