বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, নির্বাচন বিষয়ে তাঁর অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে এবং তিনি মনে করেন, ডিসেম্বরেই নির্বাচন হওয়া উচিত। বুধবার ঢাকার সেনানিবাসে আয়োজিত অফিসার্স অ্যাড্রেস অনুষ্ঠানে তিনি এই বক্তব্য দেন বলে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
অনুষ্ঠানে জেনারেল ওয়াকার বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কখনোই এমন কোনো কর্মকাণ্ডে যুক্ত হবে না, যা দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য ক্ষতিকর। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, রাজনৈতিক সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরতে হবে।
সেনাপ্রধান সকল স্তরের সেনাসদস্যদের নিরপেক্ষ থাকার নির্দেশনা দিয়ে বলেন, “দীর্ঘমেয়াদি মোতায়েন অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় সাময়িক ফল দিলেও জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিতে পারে।” তিনি সতর্ক করেন, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনীর অতিরিক্ত সম্পৃক্ততা জাতীয় নিরাপত্তায় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
তিনি আরও জানান, গত ৫ আগস্ট থেকে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ইতিবাচক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কিছু গোষ্ঠী বাহিনীকে অন্যায্যভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীগুলোর অপতৎপরতা ঠেকাতে সতর্ক থাকতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সেনা কর্মকর্তারা সরাসরি ও ভার্চুয়ালি অংশ নেন। আলোচনায় উঠে আসে মানবিক করিডর, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা ও অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার বিষয়ে নানা প্রশ্ন।
মানবিক করিডর বিষয়ে জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, “জাতীয় স্বার্থ অগ্রাধিকার দিতে হবে। এই বিষয়টি রাজনৈতিক মতৈক্যের ভিত্তিতে নির্ধারিত হওয়া উচিত। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টিও এতে যুক্ত করতে হবে।”
চট্টগ্রাম বন্দর ইস্যুতে তিনি বলেন, “এ ধরনের বড় সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগণ ও রাজনৈতিক নেতাদের মতামত নেওয়া জরুরি। কেবল রাজনৈতিক সরকারের মাধ্যমেই এমন সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত।”
সংস্কার কার্যক্রম ও জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রতিবেদন বিষয়ে তিনি বলেন, “আমার সঙ্গে এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বা কোনো পরামর্শ চাওয়া হয়নি।”
সেনাবাহিনীর প্রধানের এ বক্তব্যে নির্বাচন, নিরাপত্তা এবং জাতীয় স্বার্থ বিষয়ে বাহিনীর অবস্থান স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব ধরে রাখার এই প্রতিশ্রুতি দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।