Saturday, November 22, 2025
Homeজাতীয়সশস্ত্র বাহিনী দিবস আজ: মুক্তিযুদ্ধ থেকে বিশ্ব শান্তি, সর্বত্রই গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা

সশস্ত্র বাহিনী দিবস আজ: মুক্তিযুদ্ধ থেকে বিশ্ব শান্তি, সর্বত্রই গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা

১৯৭১ সালের এই দিনে তিন বাহিনীর সমন্বিত আক্রমণে ত্বরান্বিত হয় বিজয়। সার্বভৌমত্ব রক্ষা, দেশের উন্নয়ন ও জাতিসংঘ শান্তি মিশনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান অবিস্মরণীয়

আজ ২১ নভেম্বর, ঐতিহাসিক সশস্ত্র বাহিনী দিবস। বাংলাদেশের ইতিহাসে দিনটি অসামান্য গৌরব, বীরত্ব ও আত্মত্যাগের মহিমায় ভাস্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে মহান মুক্তিযুদ্ধে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা সম্মিলিতভাবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে, যা মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছিল।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত আক্রমণের পর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর, পুলিশ, আনসারসহ বিভিন্ন বাহিনীর বাঙালি সদস্যরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর কর্মরত বাঙালি সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরাও কর্মস্থল ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তাদের সঙ্গে যুক্ত হন হাজার হাজার মুক্তিকামী তরুণ। দীর্ঘ আট মাস দেশের ১১টি সেক্টরে বীরত্বপূর্ণ লড়াই চলার পর ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের লক্ষ্যে এই তিন বাহিনীকে একীভূত করে একযোগে আক্রমণ পরিচালনার পরিকল্পনা করা হয়। জল, স্থল ও আকাশপথে এই সমন্বিত আক্রমণ হানাদার বাহিনীর মনোবল ভেঙে দেয় এবং ১৬ ডিসেম্বরের চূড়ান্ত বিজয়ের পথ সুগম করে।

মুক্তিযুদ্ধের এই ঐতিহাসিক দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি সদস্যের অবদানকে সম্মান জানাতে প্রতি বছর ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। যদিও ১৯৮০ সালের আগে সেনাবাহিনী ২৫ মার্চ, নৌবাহিনী ১০ ডিসেম্বর এবং বিমানবাহিনী ২৮ সেপ্টেম্বর আলাদাভাবে দিবস পালন করত। পরবর্তীতে তিন বাহিনীর সমন্বিত ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ দিনটি একীভূত করা হয়।

স্বাধীনতার পর গত ৫৪ বছরে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষার পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী জাতীয় উন্নয়নেও অসামান্য অবদান রেখে চলেছে। ঝড়, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার পাশাপাশি দেশের অবকাঠামো নির্মাণ, ছবিসহ ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়ন এবং বিভিন্ন জাতীয় সংকটকালে তাদের ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী এক গর্বের নাম। ১৯৮৮ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যোগদানের মাধ্যমে যে যাত্রার শুরু হয়েছিল, তা আজ বিশ্বজুড়ে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে। বিশ্বের সংঘাতপূর্ণ বিভিন্ন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা তাদের পেশাদারিত্ব, শৃঙ্খলা ও সাহসিকতার জন্য ‘মাস্টারপিস অফ পিস ডিপ্লোমেসি’ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে। বাংলাদেশের নারী সদস্যরাও শান্তিরক্ষা মিশনে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন।

দেশের ক্রান্তিকালে এবং বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা সর্বজনবিদিত। দেশপ্রেম, পেশাদারিত্ব ও উন্নত নৈতিকতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি সদস্য দেশ ও জনগণের সেবায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে সদাপ্রস্তুত। এই বাহিনীর সদস্যরা কেবল দেশেই নয়, দেশের বাইরেও বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকাকে গর্বের সঙ্গে তুলে ধরেছেন।

RELATED NEWS

Latest News