Thursday, July 17, 2025
Homeআন্তর্জাতিকহিন্দি নয়, মাতৃভাষায় গর্ব করেই এগোবে ভারত: ইংরেজির ব্যবহার নিয়ে অমিত শাহর...

হিন্দি নয়, মাতৃভাষায় গর্ব করেই এগোবে ভারত: ইংরেজির ব্যবহার নিয়ে অমিত শাহর বিতর্কিত মন্তব্য

ইংরেজিভাষী ভারতীয়রা শিগগিরই লজ্জিত হবেন বলে মন্তব্য করেছেন অমিত শাহ, ভাষানীতিতে দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে উত্তেজনা

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন, “যাঁরা ইংরেজি ভাষায় কথা বলেন, তাঁরা শিগগিরই লজ্জা অনুভব করবেন।” দেশবাসীকে তিনি নিজ নিজ মাতৃভাষায় কথা বলার আহ্বান জানান।

এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমাদের দেশের ভাষাগুলোই আমাদের সংস্কৃতির গয়না। এসব ভাষা ছাড়া আমরা প্রকৃত ভারতীয় হয়ে উঠতে পারি না।”

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ভারতকে নেতৃত্ব দিতে হলে তা নিজস্ব ভাষার মাধ্যমেই হওয়া উচিত, ইংরেজির মাধ্যমে নয়।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারও সরকারি কাজকর্মে ইংরেজির চেয়ে হিন্দিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। সরকারি নথিপত্র, আদালত এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ায় হিন্দির ব্যবহার বাড়াতে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে, বিশেষ করে হিন্দিভাষী রাজ্যগুলোতে।

তবে হিন্দিকে এগিয়ে নেয়ার এই ধারা বিরোধিতা তৈরি করেছে বিশেষ করে অ-হিন্দিভাষী রাজ্যগুলোতে।

ভাষা ভারতের জন্য সংবেদনশীল ইস্যু, যেখানে ১৪০ কোটিরও বেশি মানুষ শতাধিক ভাষা ও হাজারো উপভাষায় কথা বলেন।

ভারতের কোনও একক জাতীয় ভাষা নেই। বরং ২২টি ভাষা সরকারিভাবে স্বীকৃত। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে হিন্দি ও ইংরেজি সরকারি ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, ভারতের সবচেয়ে বেশি মানুষ হিন্দিতে কথা বলেন, প্রায় ৫২ কোটি। এরপর রয়েছে বাংলা, মারাঠি, তেলেগু এবং তামিল।

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য বলেন, “পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো সাধারণত এক ভাষাভিত্তিক, কিন্তু ভারত বহুভাষিক। এখান থেকেই এই টানাপোড়েনের সূচনা।”

আগেও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে এককভাবে হিন্দিকে সরকারিভাষা করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তীব্র বিরোধিতার মুখে তা সফল হয়নি।

হিন্দি প্রসারে বিজেপির দীর্ঘদিনের প্রচারণা রয়েছে। বিজেপির আদর্শিক সংগঠন আরএসএস-এর মুখপত্র ‘অর্গানাইজার’-এর সম্পাদক প্রফুল্ল কেতকার বলেন, “ইংরেজি ঔপনিবেশিক ঐতিহ্য, এটি ভারতীয় ভাষা দ্বারা প্রতিস্থাপিত হওয়া উচিত। হিন্দি অন্য ভাষার মর্যাদা ক্ষুন্ন না করেই কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হতে পারে।”

যদিও বিজেপি বলছে, তারা সব ভারতীয় ভাষার উন্নয়ন চায়, কিন্তু কেবল হিন্দিকেই এগিয়ে নেয়ার এই চেষ্টা সমালোচনার মুখে পড়েছে।

দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলো যেখানে হিন্দির সঙ্গে ভাষাগত মিল কম, সেখানে বিরোধিতা আরও প্রবল।

পূর্বতন অধ্যাপক স্যামুয়েল আসির রাজ বলেন, “অ-হিন্দিভাষী রাজ্যগুলোর জন্য হিন্দিও ঠিক ততটাই বিদেশি, যতটা ইংরেজি।”

মহারাষ্ট্রে শিশুদের জন্য তৃতীয় ভাষা হিসেবে হিন্দি শেখানো বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নেয় বিজেপি সরকার, তবে তীব্র বিরোধিতার মুখে তা বাতিল করা হয়।

তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্টালিন জাতীয় শিক্ষানীতির বিরোধিতায় সোচ্চার।

১৯৬৮ সালে প্রণীত এবং ২০২০ সালে হালনাগাদ হওয়া জাতীয় শিক্ষানীতিতে তিন ভাষার ফর্মুলা রয়েছে। অ-হিন্দিভাষী রাজ্যগুলোতে স্থানীয় ভাষা, হিন্দি ও ইংরেজি শেখানোর কথা বলা হয়েছে।

তবে নীতিতে বলা হয়েছে, অন্তত দুটি ভাষা হতে হবে ভারতীয়, হিন্দি বাধ্যতামূলক নয়। তামিলনাড়ু এই নীতি মানতে নারাজ এবং কেবল তামিল ও ইংরেজি শেখাতেই আগ্রহী।

তারা মনে করে, তিন ভাষার ফর্মুলা আসলে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার একটি কৌশল।

তবে বাস্তবতা হলো, শিক্ষাব্যবস্থা, ব্যবসা এবং আদালতসহ অনেক ক্ষেত্রে ইংরেজির ব্যবহার এখনও বহুল। জনগণ বিশ্বাস করে, ইংরেজি শেখাই উন্নত জীবন ও ভালো চাকরির চাবিকাঠি।

বলিউড এবং উত্তর ভারতের মানুষের দক্ষিণে অভিবাসনের ফলে হিন্দির প্রসার ঘটছে ঠিকই, তবে ইংরেজিকে সরিয়ে হিন্দি একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

ভট্টাচার্য বলেন, “কেন্দ্রের পক্ষ থেকে হিন্দির পেছনে বিপুল অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে, এটি চাপিয়ে দেওয়ার অনুভূতি তৈরি করছে।”

তার মতে, “একতা মানেই কেন্দ্র কর্তৃক আরোপিত একরূপতা নয়। ভাষা নিয়ে বিরোধ প্রতিরোধে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সংলাপ এবং সমঝোতা জরুরি।”

  • বিষয়াদি সম্পর্কে আরও পড়ুন:
  • ভারত

RELATED NEWS

Latest News