সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপি ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সম্পর্ক দৃশ্যত তিক্ত হলেও এখন সবার নজর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বহুল আলোচিত বৈঠকের দিকে।
শুক্রবার (১৩ জুন) লন্ডনের ডর্চেস্টার হোটেলে স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
বিএনপি ও জোটের শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, এই বৈঠক রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে এবং একটি সমঝোতার পথ তৈরি করতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
এই আলোচনা এমন সময়ে হচ্ছে, যখন প্রধান উপদেষ্টা সম্প্রতি জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে আগামী বছরের প্রথমার্ধে সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে বিএনপি শুরু থেকেই চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়ে আসছে।
বিএনপি সূত্র বলছে, এই বৈঠকের মাধ্যমে নির্বাচনের সময়সূচি এগিয়ে আনার বিষয়ে অগ্রগতি হতে পারে।
একজন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য জানান, “তারেক রহমান বৈঠকে স্পষ্ট করবেন কেন এপ্রিল নয়, ডিসেম্বরেই নির্বাচন হওয়া উচিত। তবে যদি প্রধান উপদেষ্টা ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে সমঝোতার প্রস্তাব দেন, তাহলে নমনীয়তার জায়গা রয়েছে।”
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি এই বৈঠক গঠনমূলক আলোচনা এবং গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের পথ তৈরি করবে।”
তিনি জানান, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরবেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, প্রধান উপদেষ্টা এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনের সময়সূচি পুনর্বিবেচনা করবেন।
এদিকে ড. মইন খান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পূর্বের কঠোর অবস্থান থেকে কিছুটা নমনীয় হচ্ছে এবং সমঝোতার পথে এগোচ্ছে।
আরও পড়ুন: ধানমন্ডি ৩২ ভবন ভাঙার সময় পুলিশের রাস্তায় নামতে ভয় ছিল: অধ্যাপক ইউনূস
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এই বৈঠক রাজনৈতিক সৌজন্য রক্ষার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। আলোচনা কেন্দ্রীভূত হবে নির্বাচন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিরপেক্ষতা এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করার বিষয়গুলো ঘিরে।
তিনি আরও বলেন, দেশের নিরাপত্তা, রাজনীতি ও বৃহত্তর জাতীয় প্রেক্ষাপটও আলোচনার অংশ হতে পারে।
বৈঠক নির্বাচনের সময়সূচি এগিয়ে আনতে কতটা সফল হবে জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন বলেন, “আমরা আশাবাদী যে এই বৈঠকের মাধ্যমে অনেক বিষয়ে গঠনমূলক সমাধান আসবে।”
অন্যদিকে বিএনপি জোটের অন্যতম শরিক ১২-দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, “এই বৈঠকের মাধ্যমে দেশের রাজনীতি ও নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যে ধোঁয়াশা আছে তা দূর হবে।”
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই বৈঠক সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথ তৈরি করবে।
তিনি বলেন, “এই আলোচনার ফলাফল জনগণের প্রত্যাশার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হবে।”
সর্বোপরি, বিএনপি নেতারা মনে করছেন, এই উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক সমঝোতার নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে এবং দেশের রাজনীতিতে ইতিবাচক বার্তা পাঠাবে।