জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ জানিয়েছেন, কোনও প্রস্তাব রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। বরং দলগুলোর বক্তব্য ও প্রত্যাশা অনুযায়ী কিছু সংশোধনী প্রস্তাব রাখা হচ্ছে।
সোমবার সকাল ১১টা ১৫ মিনিটে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপের আলোচনার ১০ম দিনের সূচনা বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ড. আলী রিয়াজ বলেন, “অধিকাংশ দল জাতীয় সাংবিধানিক পরিষদ (এনসিসি) নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল। তাই কমিশন বিকল্প প্রস্তাব দিয়ে সংশোধন এনেছে। কোনো ভুল বোঝাবুঝি যেন না হয়, সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। সব পক্ষের মতামতের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এগোনো হচ্ছে। অনেক কিছু বাদ দিতে হচ্ছে।”
তিনি জানান, সময়সীমার বিষয়টি মাথায় রেখে দ্রুত কাজ শেষ করতে সবার সহযোগিতা কামনা করছেন।
সোমবারের বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, এলডিপি, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)সহ মোট ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
কমিশনের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সফর রাজ হোসেন, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আয়ুব মিয়া, বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
ড. আলী রিয়াজ বলেন, “সব বিষয়ের ওপর একমত হওয়া সম্ভব নয়। তবে ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। রাজনৈতিক নেতাদের মতামতের সাথে প্রস্তাব যেন সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, সে বিষয়েও সতর্ক আছি।”
তিনি স্পষ্ট করেন, প্রস্তাবনায় সকলের একমত হওয়া আবশ্যক নয়। তিনি বলেন, “আমি বারবার বলেছি, সবকিছুতে একমত হওয়া সম্ভব নয়। যখন দলগুলোর সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেছি, তখনই আমরা এই বিষয়টি পরিষ্কার করেছি।”
মূলনীতির বিষয়ে আলী রিয়াজ বলেন, “বহুবাদিতার ধারণা অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে শুরুতে আপত্তি থাকায় দ্বিতীয় সংশোধিত খসড়ায় তা রাখা হয়নি। একইভাবে, প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী চারটি প্রদেশ গঠনের বিষয়েও ঐক্যমত্য না থাকায় তা আলোচনা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।”
তিনি জানান, কিছু বিষয়ে আপোষ করে এগোতে হচ্ছে। “সব বিষয়ে একমত হওয়া সম্ভব নয় বলেই কিছু কিছু বিষয় বাদ দিতে হচ্ছে। তবে যেসব ক্ষেত্রে ঐকমত্যের সম্ভাবনা আছে, সেগুলোতেই আমরা মনোযোগ দিচ্ছি,” বলেন তিনি।
তিনি আরও জানান, কিছু বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে, আবার কিছু এখনও আলোচনার পর্যায়ে আছে।
সময়সীমার বিষয়টি সামনে এনে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে আবেদন জানান যেন সংগঠনগত কাজের পাশাপাশি কমিশনের আলোচনাকে গুরুত্ব দেয়। “আমরা ভেবেছিলাম এই সপ্তাহের এটিই শেষ বৈঠক হবে, যাতে আপনারা অন্য কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারেন। তবে বেশিরভাগ দলের মত অনুযায়ী এবার সপ্তাহে আরেকটি বৈঠক হতে পারে,” বলেন তিনি।
সবশেষে আলী রিয়াজ বলেন, “আপনাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে আমরা বসে প্রস্তাবগুলো কীভাবে সংশোধন করা যায় তা বিবেচনা করব। আমরা আন্তরিকভাবে এই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব যাতে কোনো বিভ্রান্তি না থাকে এবং প্রস্তাবগুলো আপনাদের মতামতের প্রতিফলন ঘটায়।”