ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে আফগান তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি এক সংবাদ সম্মেলনে নারী সাংবাদিকদের বাদ দেওয়ায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন। রবিবার দ্বিতীয় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, প্রথমবার নারীদের না ডাকা ছিল “ইচ্ছাকৃত নয়, বরং প্রযুক্তিগত ত্রুটি।”
প্রথম সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয় শুক্রবার, যেখানে কেবল ১৬ জন পুরুষ সাংবাদিক অংশ নেন। নারী সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি বলে জানায় গণমাধ্যম। পরে বিষয়টি নিয়ে ভারতে সাংবাদিক মহল ও রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।
মুত্তাকি রবিবারের সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “শুক্রবারের অনুষ্ঠানটি ছিল হঠাৎ আয়োজন করা। অল্প সময়ের মধ্যে সীমিত তালিকার ভিত্তিতে আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছিল। এর বাইরে অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।”
জাতিসংঘ আফগানিস্তানের বর্তমান অবস্থা বর্ণনা করেছে “লিঙ্গ বৈষম্যের চরম রূপ” হিসেবে, যেখানে নারীদের শিক্ষালাভ, কর্মসংস্থান ও চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তালেবান সরকার ২০২১ সালে ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে মেয়েদের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা নিষিদ্ধ রয়েছে।
তবু মুত্তাকি দাবি করেন, “আমাদের দেশে প্রায় এক কোটি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে, যার মধ্যে ২৮ লাখ নারী ও মেয়ে। নারীদের শিক্ষা নিষিদ্ধ নয়, শুধু স্থগিত রাখা হয়েছে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত।”
রবিবারের সংবাদ সম্মেলনে নারী সাংবাদিকরা সামনের সারিতে বসেন এবং তাঁরা সরাসরি প্রশ্ন তোলেন নারীদের অধিকার ও শিক্ষার বিষয়ে। যদিও মন্ত্রীর উত্তর অনেকের কাছে সন্তোষজনক মনে হয়নি।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আফগান দূতাবাসে অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। তবু ভারতীয় সাংবাদিক সংগঠনগুলো বলেছে, এমন বৈষম্যমূলক আচরণ ভারতের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী।
আরো পড়ুন | ভারত-আফগানিস্তান সম্পর্ক আরও জোরদার হবে: দেওবন্দে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এডিটরস গিল্ড অব ইন্ডিয়া এবং নেটওয়ার্ক অব উইমেন ইন মিডিয়া এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, “যেকোনো কূটনৈতিক স্থাপনাই হোক, ভারতীয় ভূখণ্ডে নারীদের প্রতি এমন বৈষম্য মেনে নেওয়া যায় না।”
রাজনীতিক রাহুল গান্ধীও এ ঘটনায় সমালোচনা করে বলেন, “নারী সাংবাদিকদের বাদ দিয়ে অনুষ্ঠান চালাতে দেওয়া মানে ভারতের প্রতিটি নারীকে বলা হচ্ছে, তোমরা নিজেদের পক্ষে দাঁড়াতে পারবে না।”
সমালোচনার পর তালেবান প্রতিনিধি দল নতুন করে রবিবারের এই “অন্তর্ভুক্তিমূলক” সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে, যেখানে পুরুষ ও নারী সাংবাদিকরা সমানভাবে অংশ নেন। অনেকে মনে করছেন, ভারত সরকারের অনানুষ্ঠানিক হস্তক্ষেপেই দ্বিতীয় অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়।