বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্সের চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার দেশের ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত লাইসেন্স ইস্যু নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রভাব ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার উদাসীনতায় আর্থিক খাতে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে এবং আমানতকারীদের আস্থার মারাত্মক ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “এত ছোট একটি দেশে এত ব্যাংক দরকার ছিল কি? এক সময় ৪–৫টি সরকারি ব্যাংক ছিল, পরে কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক এল, এরপর আমরাও এলাম। এর বেশি ব্যাংক দরকার ছিল না।”
তিনি জানান, দায়িত্ববান উদ্যোক্তাদের হাতেই ব্যাংক পরিচালনার অনুমতি থাকা উচিত। “যদি কেউ একা ব্যাংক করতে চান, বা দশজন ব্যবসায়ী একসাথে চায়, তাহলে সেটা তাদের দায়িত্ব। কিন্তু এভাবে দায়িত্বহীনভাবে ব্যাংক লাইসেন্স দিলে সমস্যা হবেই,” বলেন তিনি।
তার মতে, পরিকল্পনার অভাব এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে লাইসেন্স দেওয়ার ফলেই ব্যাংক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা ভুল পরিকল্পনার ধারাবাহিকতার শিকার হয়েছি। সেখান থেকে ফিরে আসা কঠিন।”
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হুঁশিয়ারিটি আসে আমানতকারীদের আস্থা নিয়ে। “একবার যদি এই আস্থা হারিয়ে যায়, তাহলে সব শেষ। একজন ব্যাংকের আসল শক্তিই হলো আমানতকারী। যদি তাদের আস্থা না থাকে, তাহলে ব্যাংকের আর কোনো লাভ নেই,” সতর্ক করেন আবদুল হাই সরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৬টি ব্যাংক প্রতিষ্ঠান অ্যাডভান্স-ডিপোজিট রেশিও (ADR) সীমা লঙ্ঘন করেছে। এর মধ্যে সাতটি ব্যাংক তাদের আমানতের ১০০ শতাংশের বেশি ঋণ দিয়েছে, যা তারল্য সংকট এবং রেটিং কমার মত উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
ব্যাংক খাতে এমন পরিস্থিতিতে, বিশেষজ্ঞ মহল এবং খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নতুন ব্যাংক অনুমোদনের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতা ও স্বচ্ছতা জরুরি। দেশে দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় সরকারের নীতিগত সংস্কার এখন সময়ের দাবি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।