ব্রিটেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও লেবার পার্টির ডেপুটি লিডার অ্যাঞ্জেলা রেইনার শুক্রবার পদত্যাগ করেছেন। একটি তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে যে তিনি সম্পত্তি কর (স্ট্যাম্প ডিউটি) প্রদানে নিয়ম ভঙ্গ করেছেন। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বাধীন লেবার সরকারের জন্য বড় ধরনের ধাক্কা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রেইনার এ সপ্তাহের শুরুতে স্বীকার করেছিলেন যে তিনি সমুদ্রপাড়ের একটি ফ্ল্যাট কেনার সময় নির্ধারিত অতিরিক্ত কর পুরোপুরি পরিশোধ করেননি। তিনি স্বেচ্ছায় সরকারের স্বাধীন নৈতিকতা উপদেষ্টার কাছে বিষয়টি তদন্তের জন্য জমা দেন।
নৈতিকতা প্রধান লরি ম্যাগনাস এক চিঠিতে জানান, রেইনার আইনগত পরামর্শ পাওয়ার পরও সতর্কতা অনুসরণ করেননি। এর ফলে মন্ত্রীসভার আচরণবিধি ভঙ্গ হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
পদত্যাগপত্রে রেইনার লিখেছেন, “আমি সর্বোচ্চ মানদণ্ডে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছি। কর বিষয়ক বিশেষজ্ঞ পরামর্শ না নেওয়ায় আমি অনুতপ্ত এবং সম্পূর্ণ দায়ভার নিচ্ছি।” তিনি একসঙ্গে হাউজিং মন্ত্রী ও লেবার পার্টির ডেপুটি লিডারের পদ থেকেও সরে দাঁড়িয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী স্টারমার জবাবে বলেন, সরকারের জন্য রেইনারকে হারানো কষ্টের হলেও তিনি দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই লেবার সরকার একের পর এক সংকটে পড়ছে। কল্যাণ ভাতা সংস্কার ও জ্বালানি ভর্তুকি নিয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হয়েছে। অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় ডানপন্থী নেতা নাইজেল ফারাজের রিফর্ম ইউকে পার্টির প্রতি জনসমর্থন বাড়ছে। সাম্প্রতিক জরিপে লেবার পার্টি রিফর্ম ইউকের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে।
রেইনার বুধবার স্বীকার করেছিলেন যে দক্ষিণ ইংল্যান্ডে কেনা ফ্ল্যাটে তিনি কম হারে কর পরিশোধ করেছেন। আগে গণমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল যে তিনি আরেকটি বাড়ির কাগজপত্র থেকে নিজের নাম সরিয়ে প্রায় ৪০ হাজার পাউন্ড সাশ্রয় করেছিলেন।
২০২৩ সালে তালাকের পর রেইনার নিজের পারিবারিক বাড়ির অংশ বিক্রি করে তা ছেলের জন্য গড়া একটি ট্রাস্টে হস্তান্তর করেন। ওই অর্থ ব্যবহার করেই তিনি প্রায় ৮ লাখ পাউন্ড মূল্যের হোভ শহরের ফ্ল্যাটটি কেনেন। কর প্রদানের সময় তিনি ফ্ল্যাটটিকে প্রধান আবাসন হিসেবে দাবি করেন, কিন্তু পরে স্বীকার করেন এটি ভুল ছিল।
ম্যাগনাস মন্তব্য করেন, কর আইন জটিল হলেও রেইনারের দায়িত্ব ছিল বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নেওয়া। সেটা না করায় তার আচরণ মন্ত্রীসভার সর্বোচ্চ মানদণ্ড পূরণ করেনি।
৪৫ বছর বয়সী রেইনারকে অনেক সময় লেবার পার্টির ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কনজারভেটিভ ও ডানপন্থী গণমাধ্যম প্রায়ই তাকে রাজনৈতিক আক্রমণের লক্ষ্য বানিয়েছে।
কিশোরী বয়সে মা হওয়া রেইনার স্কুল শেষ করতে পারেননি। পরবর্তীতে তার সোজাসাপটা কথা বলার ধরন শ্রমজীবী মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা এনে দেয়। তিনি স্টকপোর্টে বড় হয়েছেন, যা ম্যানচেস্টারের উপকণ্ঠে অবস্থিত এবং অঞ্চলের অন্যতম দরিদ্র সামাজিক আবাসন এলাকায় পড়েছে।