চট্টগ্রামে চলতি মরসুমে ঘরের বাম্পার ফলনের পরও পেঁয়াজের দাম গত দুই সপ্তাহে বিক্রি ও পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। খুচরা বাজারে এটি প্রায় ২৯ শতাংশ বৃদ্ধি।
মাসব্যাপী স্থিতিশীল থাকার পর হঠাৎ এই দাম বৃদ্ধিতে ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা দুজনেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
ক্রেতারা এই দ্রুত মূল্যবৃদ্ধিকে অনিয়মিত এবং সিন্ডিকেট দ্বারা বাজার মনিপুলেশনের ফল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
কাঠুংগঞ্জের ব্যবসায়ীরা এই দামের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে জেলা ভিত্তিক মকাম মালিকদের ওপর দোষ চাপিয়েছেন। তারা বলছেন, গত দুই সপ্তাহে মকামগুলোর অপ্রত্যাশিত দাম বৃদ্ধিই দেশের অন্যান্য অংশে দামের ঊর্ধ্বগতি বাড়িয়েছে।
মঙ্গলবার কাঠুংগঞ্জ পাইকারি বাজারে ঘরের পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৭২ থেকে ৮৫ টাকা পর্যন্ত ওঠা দেখা গেছে, যা মাত্র দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৫০ থেকে ৫৮ টাকা।
বাহাদ্দারহাট, কাজীর দেওয়াড়ি ও চকবাজারের মতো প্রধান খুচরা বাজারগুলোতে পেঁয়াজের দাম এখন ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি, যেখানে দুই সপ্তাহ আগেও ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। ঢাকার খুচরা বাজারে স্থানীয় পেঁয়াজ ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) সোমবারের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।
কাঠিবারহাটের বাসিন্দা বেলাল উদ্দিন বলেন, পাঁচ-ছয় দিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম ২০ টাকা বা তার বেশি বেড়েছে যা স্বাভাবিক নয়। চাল, সবজি ও মাছের দাম আগে থেকেই বেশি হওয়ায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা আরও কঠিন হচ্ছে।
গত বছরের একই সময়ে টিসিবির তথ্য অনুযায়ী পেঁয়াজের দাম ছিল আরও বেশি, যেখানে স্থানীয় পেঁয়াজের কেজি মূল্য ছিল ১১০ থেকে ১২০ টাকা এবং আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম ১০০ থেকে ১১০ টাকা পর্যন্ত।
বাম্পার ঘরের ফলনের কারণে এবার পেঁয়াজ আমদানির প্রয়োজন পড়েনি। গত বছর পর্যন্ত ভারতীয় আমদানিকৃত পেঁয়াজ বাজার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। তবে চলতি বছর সরকার আমদানি বন্ধ রেখেছিল।
কাঠুংগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়ার মার্কেটের ব্যবসায়ী আবদুর রহিম জানান, রাজবাড়ি, পাবনা, ফরিদপুর, ঝিনাইদহ এবং কুষ্টিয়া থেকে পেঁয়াজ এসে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিতরণ করা হয়।
তিনি বলেন, “গত দুই সপ্তাহে পাইকারি বাজারে দাম বেশি বেড়েছে, যা সামগ্রিক বাজারে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।”
জনতা ট্রেডার্সের ম্যানেজার ওহিদ আলম জানিয়েছেন, মাত্র এক সপ্তাহ আগে রাজবাড়ির পেঁয়াজের দাম ছিল ৬৮ টাকা, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৫৮ টাকা।
তিনি বলেন, “কিছু অংশে বৃষ্টি ও পরিবহন বিঘ্নের কারণে সরবরাহ সীমিত হওয়ায় পাইকারিরা বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখছে। সরকার আমদানি অনুমোদন দিলে দাম কমবে।”
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্লান্ট কোয়ারেন্টাইন উইংয়ের এক কর্মকর্তা গোপনে জানিয়েছেন দেশের পেঁয়াজের মজুদ পর্যাপ্ত রয়েছে এবং হঠাৎ দামের উর্ধ্বগতি হয়তো মজুদদারদের কারসাজি।
অধিদপ্তরের আমদানি বিভাগের উপ-পরিচালক আশরাফুল আলম বলেন, সাম্প্রতিক বৃষ্টিপাত পরিবহন ব্যাহত করেছে যা সরবরাহে প্রভাব ফেলেছে।
তিনি জানান, “আমদানি আবার শুরু করলে চাষিরা ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন। বিষয়টি আমরা উচ্চ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”
অন্যদিকে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশীর উদ্দিন মঙ্গলবার একটি সংবাদ সম্মেলনে জানান, চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে।
তবে আমদানি কতটুকু ও কখন হবে সে বিষয়ে এখনো বিস্তারিত জানাননি।