বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস মঙ্গলবার মালয়েশিয়ায় সরকারি সফরের সময় দেশটির সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বিনিয়োগ সম্পর্ক জোরদারের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। তিনি মালয়েশিয়াকে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য দরজা খোলা রাখার আহ্বান জানান।
সরকারি আলোচনা ও পাঁচটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর ও তিনটি নোট বিনিময়ের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বাংলাদেশের শ্রমিকদের অবদানকে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের শ্রমিকরা দুই দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আমরা মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের জন্য দরজা আরও প্রশস্ত করার আশা করি।”
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনুস বলেন, মালয়েশিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকরা নতুন দক্ষতা অর্জন করে দেশে ফিরে নিজস্ব ব্যবসা গড়ে তুলছেন। তারা পাঠানো অর্থ পরিবারের জীবিকা, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহায়তা করছে।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া অনেক দিক দিয়ে কাছাকাছি আসছে। বিশেষ করে বাংলাদেশি শ্রমিকদের কারণে এই বন্ধন আরও দৃঢ় হয়েছে।”
অধ্যাপক ইউনুস মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগের ব্যাপক সুযোগ থাকার কথাও জানান। তিনি মালয়েশিয়ার উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশের প্রযুক্তি ও মানব সম্পদ কাজে লাগিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বিশ্ববাজারে পণ্য রফতানির আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “আমরা অর্থনৈতিক সম্পর্ক ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে চাই। দেশের অর্থনীতি দ্রুত উন্নয়নশীল ও টেকসই হবে এই প্রত্যাশা করছি।”
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা ফিরে পাওয়ার কথা তুলে ধরে বলেন, “আমাদের সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো সচল করেছে। এখন আমরা নির্বাচন প্রস্তুত।”
তিনি বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং এর জন্য মালয়েশিয়ার সমর্থনের ওপর নির্ভরতা ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম অধ্যাপক ইউনুসের নেতৃত্বে দেশের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় প্রশংসা করেন। তিনি দুই দেশের মধ্যে বিনিয়োগ, বাণিজ্য, সংস্কৃতি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর কথাও বলেন।
তিনি বলেন, মালয়েশিয়া ইতোমধ্যে পেট্রোনাস ও অ্যাক্সিয়াটার মতো খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে শক্তিশালী অংশীদারিত্ব রেখেছে এবং এখন হালাল, স্টেম, গবেষণা ও সেমিকন্ডাক্টর খাতে উন্নতি কামনা করছে।
মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র ও মানবসম্পদ মন্ত্রীরা মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের সুবিধার্থে মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসার ব্যবস্থা করার বিষয়েও সম্মতি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ থেকে সরকারি প্রতিনিধি দলেও ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুহাম্মদ তোহিদ হোসেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নাজরুল, জ্বালানি উপদেষ্টা ফজলু কাবির খান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা।
এছাড়া বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।