ভারতের তিরুপুর, যা দেশের নিট পোশাক রপ্তানির অন্যতম কেন্দ্র, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কবৃদ্ধি বড় ধাক্কা দিয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ৫০ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়ায় রপ্তানিকারকদের অর্ডার থেমে গেছে, কিছু অর্ডার বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের দিকে চলে যাচ্ছে। এসব দেশের যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক হার তুলনামূলক কম হওয়ায় তারা এখন বেশি প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠেছে।
একজন তিরুপুর রপ্তানিকারক জানান, তার নিয়মিত মার্কিন চালান ইতিমধ্যে পাকিস্তানে চলে গেছে। অন্যজন বলেন, মার্কিন ক্রেতা গ্রীষ্মকালীন অর্ডার নিশ্চিত করার আগে অপেক্ষা করতে বলেছে। কেউ কেউ জানান, আগে ২৫ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির বোঝা বহনের দাবি করা হতো, এখন তা দ্বিগুণ হয়েছে।
বর্তমানে কিছু নিট পোশাকের উপর কার্যকর শুল্কহার দাঁড়িয়েছে সর্বোচ্চ ৬৪ শতাংশ, যা পণ্যের দাম প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে ভারতের রপ্তানি বাজারে অবস্থান দুর্বল হচ্ছে এবং অনেকে একে কার্যত বাণিজ্যিক অবরোধের সমান বলে মনে করছেন।
তামিলনাড়ুর তিরুপুর, কোয়েম্বাটুর ও করুর অঞ্চলে ১২ লাখের বেশি শ্রমিক কর্মরত এবং বছরে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি রুপির পোশাক রপ্তানি হয়। যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলের অন্যতম বড় ক্রেতা হলেও শুল্কবৃদ্ধি পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে। তিরুপুর একাই দেশের নিট পোশাক রপ্তানির ৫৫ শতাংশ সরবরাহ করে, যা প্রায় ৪০ হাজার কোটি রুপি সমমূল্যের।
তিরুপুর এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কে এম সুব্রামানিয়ান জানান, অ-ব্র্যান্ডেড ক্রেতারা দ্রুত বিকল্প উৎসে চলে যাবে। ব্র্যান্ডেড ক্রেতারা সামাজিক মান ও কার্যক্রমের কারণে কিছুটা সময় টিকলেও ক্ষতি হবে নিশ্চিত। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে অর্ডার কমে গেলে ১ থেকে ২ লাখ শ্রমিকের চাকরি ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
কোয়েম্বাটুর ও করুর অঞ্চলের গৃহসজ্জা পণ্যের রপ্তানিতেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। সাউদার্ন ইন্ডিয়া মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কে সেলভারাজু জানান, বিছানার চাদর ও তোয়ালে রপ্তানির অর্ডার পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, শুধু শুল্কবৃদ্ধি নয়, তুলা আমদানিতে ১১ শতাংশ শুল্ক এবং জিএসটি কাঠামোর অসামঞ্জস্যতাও রপ্তানি খরচ বাড়াচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো এসব সমস্যার সম্মুখীন নয়। ফলে ভারতীয় পণ্যের দাম তুলনায় বেশি হয়ে যাচ্ছে।
শিল্প সংগঠনগুলো অবিলম্বে সরকারি হস্তক্ষেপের দাবি জানাচ্ছে। তারা তুলা আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার, জিএসটি কাঠামো সংস্কার এবং রপ্তানিকারকদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। অন্যথায় বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার কাছে স্থায়ীভাবে বাজার হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।
সুব্রামানিয়ান আশা প্রকাশ করেন, দ্রুত পদক্ষেপ নিলে এই সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। তিনি বলেন, ‘‘আমরা করোনা সময়ও টিকে ছিলাম। এবারও পারব, যদি নীতিগত সহায়তা মেলে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়।’’