প্রকাশিত: ২৪ মে ২০২৫, ৭:০১ এএম
আন্তর্জাতিক প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক চাপ বাড়াতে নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে ভারত। আসন্ন FATF (Financial Action Task Force) এর জুন মাসের প্লেনারিতে পাকিস্তানকে আবারও ‘গ্রে লিস্ট’ বা ধূসর তালিকায় ফের অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব তুলতে চায় দিল্লি।
ভারতের অভিযোগ, পাকিস্তান এখনো নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন যেমন লস্কর-ই-তইবা এবং জয়েশ-ই-মোহাম্মদের কার্যক্রমে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহায়তা দিচ্ছে।
এই অভিযোগ আরও জোরালো হয় সম্প্রতি ২২ এপ্রিল পুলওয়ামায় ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষিতে, যেখানে প্রাণ হারান ২৬ জন সাধারণ নাগরিক। ভারত এই ঘটনাকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে সন্ত্রাসবাদের একটি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরছে।
যদি পাকিস্তানকে পুনরায় FATF-এর ধূসর তালিকাভুক্ত করা হয়, তবে দেশটির আর্থিক লেনদেনে নজরদারি বাড়বে, বিদেশি বিনিয়োগ কমবে এবং আইএমএফ বা বিশ্বব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তা পাওয়ায় জটিলতা সৃষ্টি হবে।
২০২১ সালের একটি আইএমএফ গবেষণায় দেখা যায়, ধূসর তালিকায় থাকা দেশগুলোর সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ গড়ে ৩ শতাংশ কমে যায় এবং পোর্টফোলিও বিনিয়োগ কমে প্রায় ২.৯ শতাংশ।
পাকিস্তানের অর্থনীতি ইতোমধ্যেই উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ও বৈদেশিক রিজার্ভের ঘাটতির চাপে বিপর্যস্ত। FATF তালিকাভুক্ত হলে সংকট আরও গভীর হতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
এর আগে ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান FATF-এর নজরদারিতে ছিল। যদিও ২০২২ সালে কিছু সংস্কার বাস্তবায়নের পর দেশটিকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন:
এবার নতুন করে প্রস্তাবটি গৃহীত করতে ভারতকে অন্যান্য FATF সদস্য দেশগুলোর সমর্থন নিশ্চিত করতে হবে। সংস্থাটি সম্প্রতি তাদের মানদণ্ড পরিবর্তন করে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে শুরু করেছে, যেখানে উন্নত অর্থনৈতিক কাঠামো থাকা দেশগুলোর প্রতি নজর বাড়ানো হবে।
তবে নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কেবলমাত্র এমন দেশগুলোই সক্রিয় পর্যালোচনার আওতায় আসবে যারা FATF সদস্য, যাদের আর্থিক সম্পদ ১০ বিলিয়নের বেশি অথবা যারা বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থায় গুরুতর হুমকি তৈরি করছে।
এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান আবারও যদি তালিকাভুক্ত হয়, তবে তাদের জন্য ২ বছরের পর্যবেক্ষণকাল নির্ধারিত হতে পারে যাতে তারা FATF-এর মানদণ্ড পূরণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চাপ বৃদ্ধির কৌশল হিসেবে কাজ করতে পারে, বিশেষ করে যখন দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে।